কোভিশিল্ডের সঙ্গে হৃদরোগের কোনও সম্পর্ক নেই, জানিয়ে দিল সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

সম্প্রতি বেশ কিছু মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পিছনে অনেকেই করোনার টিকাকে কাঠগড়ায় তুলেছিল। আশঙ্কা করা হয়েছিল, করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে হৃদরোগের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। এবার ভারতে সর্বাধিক ব্যবহৃত করোনা টিকা ‘কোভিশিল্ড’-এর উৎপাদক সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া সাফ জানিয়ে দিল, কোভিশিল্ডের সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। পাশাপাশি, এ ব্যাপারে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল (আইসিএমআর) এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি) তাদের যৌথ রিপোর্ট জানিয়েছে, করোনার প্রতিষেধক হৃদ্‌রোগের কারণ নয় বরং এই প্রতিষেধকের কারণেই অতিমারির আবহে জটিল হার্টের রোগ থেকে বেঁচে গিয়েছেন অনেকেই।

প্রসঙ্গত কোভিশিল্ড টিকা তৈরি করেছিল অ্যাস্ট্রোজেনেকা। অভিযোগ আগে উঠেছিল, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় তৈরি করোনা টিকা নেওয়ার কারণে ‘থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ নামের রোগ হচ্ছে। এই ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রোজেনেকা স্বীকার করে নিয়েছিল, করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যদিও সেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে, এমন কোনও অভিযোগ স্বীকার করা হয়নি বা প্রমাণিত হয়নি। আবার করোনাকালে কেন্দ্রের মোদী সরকারের অনুমোদনের ভিত্তিতে অ্যাস্ট্রোজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড টিকা উৎপাদনে আমাদের দেশে দায়িত্বে ছিল সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। এবার সেই উত্পাদক সংস্থা  সিরাম জানিয়েছে, কোভিশিল্ড টিকা এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা কখনওই হৃদ্‌যন্ত্রে প্রভাব ফেলবে না। বরং ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হার্টকে বাঁচাবে।

দিল্লি এমসের ধাঁচেই গবেষণা চালাচ্ছে আইসিএমআর ও এনসিডিসি। তারা করোনার প্রতিষেধক হৃদ্‌যন্ত্রের উপরে কী প্রভাব ফেলেছে তা খতিয়ে দেখছে। যৌথ সমীক্ষার সেই রিপোর্টে আইসিএমআরও দাবি করেছে, সাম্প্রতিক সময়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এমন বহু জনের উপরে সমীক্ষাটি চালানো হয়েছে। হৃদ্‌রোগের কারণ দীর্ঘ দিনের কোনও ক্রনিক অসুখ, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস ও জীবনযাপনে অনিয়ম। এছাড়া বাড়তে থাকা স্থূলত্ব, ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে কাজ করা, যথেচ্ছ পরিমাণে ফুড সাপ্লিমেন্ট খাওয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে জিনগত কারণও দায়ী রয়েছে। কার্যত হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হওয়ার সঙ্গে কোভিড টিকার কোনও সম্পর্কই নেই। করোনার টিকায় ক্ষতি হওয়া তো দূরের কথা, বরং তা মানবদেহের রক্ষা কবচের কাজ করেছে।


উল্লেখ্য, অতিমারির সময়ে জিনের গঠনবিন্যাসের বদল ঘটিয়ে ভাইরাস বারে বারেই তার রূপ পরিবর্তন করেছে। ফলে এই ভাইরাসটি আরও সংক্রামক চেহারা নিয়ে রোগ বিস্তার করেছে। অনেকে আবার বিরল রোগেও আক্রান্ত হয়েছেন। সে সব ক্ষেত্রে এই করোনা প্রতিষেধকই উপযুক্ত সুরক্ষা দিয়েছে। দেখা গিয়েছে, সঠিক ডোজে করোনার প্রতিষেধক নেওয়ার ফলে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে গিয়েছে। যৌথ গবেষণায় জানা গিয়েছে, কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ড উভয়ের গ্রহীতাদের উপরেই একই ইতিবাচক ফল পাওয়া গিয়েছে।