কংগ্রেসে নেতাদের ইস্তফার হিড়িক, পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও মিলিন্দ দেওরা

মিলিন্দ দেওরা ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া (File Photo: IANS)

দলের পদ থেকে নেতাদের ইস্তফা দেওয়ার ধারা অব্যাহত– কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে রাহুল গান্ধির পদত্যাগ করার পর এআইসিসি সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ।

লােকসভা নির্বাচনে দল ধরাশায়ী হওয়ার পর ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুল গান্ধি দলের সভাপতি পদ থেকে সরে দাড়ানাের সিদ্ধান্ত ঘােষণা করেছিলেন।

জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেন, ‘জনাদেশ মেনে নিয়েছি। দলের পরাজয়ের দায় স্বীকার করে আমি অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দিলাম। ইস্তফা পত্রটি রাহুল গান্ধিকে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার ওপর রাহুল গান্ধি আস্থা রেখে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন। উনি আমাকে দলের জন্য কাজ করার একটা বড় সুযােগ দিয়েছিলেন। রাহুল গান্ধিকে ধন্যবাদ’।


পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে দলকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার করার গূঢ় দায়িত্ব সিন্ধিয়াকে দেওয়া হয়েছিল। লােকসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের ঘাঁটি গুনা আসনে তিনি হেরে যান। কয়েকমাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে দল জয় লাভ করেছিল।

এদিকে, আজ লক্ষণীয়ভাবে মুম্বই কংগ্রেসের প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন মিলিন্দ দেওরা। তিনি বলেন, ‘দলের পরাজয়ের দায় নিয়ে দলের মুম্বই শাখার প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিলাম। জাতীয়স্তরে দলকে শক্তিশালী করে তােলার লক্ষ্যে কাজ করতে চাই। সে কারণে প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিলাম’।

তিনি বলেন, রাহুল গান্ধির সঙ্গে আলােচনা করে তিনি পদ থেকে সরে দাড়ানাের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দক্ষিণ মুম্বই লােকসভা আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত দলের শহর শাখার দেখাশােনার জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করার পরামর্শ দিয়েছি। কাকে কাকে ওই কমিটির সদস্য করা হবে তা দলের নেতাদের সঙ্গে আলােচনা করে ঠিক করব। মুম্বই কংগ্রেসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত আমি পরামর্শ দেব। চলতি বছরের শেষভাগে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচন হবে। দলকে একত্রিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমি সভাপতি পদ গ্রহণ করেছিলাম। রাহুল গান্ধির সঙ্গে আলােচনা করার পর আমি ইস্তফা দেব ঠিক করি’।

মুম্বই কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রধান সঞ্জয় নিরুপম বলেন, ‘রাহুল গান্ধি দলের পরাজয়ের সমস্ত দায় নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি একা দায়ি নন, সকলেই দায়ি। সে কারণে দলের পরাজয়ের দায় সমস্ত নেতাদের গ্রহণ করা উচিত’।

লােকসভা ভােটে কংগ্রেসের লজ্জাজনক হারের পর কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সভাপতি রাহুল গান্ধি ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। পরে রাহুল গান্ধি ভােট আসন্ন রাজ্যগুলির প্রদেশ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার ইচ্ছা প্রকাশ করার পর দলের সকলের মনে খানিক আশার সঞ্চার হয়। কিন্তু গত সপ্তাহে তিনি কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। 

তিনি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পর কয়েক সপ্তাহ ধরে তুঘলক রােডের বাড়িতে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। দলের কোনও নেতার সঙ্গে দেখা করেননি। তিনি গােড়া থেকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সভাপতি পদ থেকে সরে দাড়ানাের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাড়ানাের কোনও প্রশ্ন নেই।

লােকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি পদ থেকে সরে দাড়ানাের সিদ্ধান্তে অনড় রাহুল গান্ধি বলেছিলেন, ‘আমি কাউকে দলের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলতে পারি না। দলের পরাজয়ের দায় কেউ নেবেন কিনা সেটা একান্ত তাঁদের ব্যাপার’।

হরিয়ানা কংগ্রেসের বৈঠকে রাহুল গান্ধি বলেছিলেন দেশে লােকসভা নির্বাচনে দলের পরাজয়ের সমস্ত দায় নিয়ে তিনি সভাপতি পদ থেকে সরে দাড়বেন। তারপরই পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়।

কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ বিবেক তাংখা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ইস্তফা দেন। পাশাপাশি দিল্লি কংগ্রেস ও তেলেঙ্গানা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতিরা ইস্তফা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি দেশের মােট ৩০০ জন কংগ্রেস নেতাও পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।

বিবেক তাংখা টুইট করে লেখেন, ‘দলের পদ থেকে আমাদের সকলের ইস্তফা দেওয়া কাম্য– রাহুল গান্ধিকে তাঁর নিজের পছন্দমতাে টিম গড়ে নেওয়ার একটা খােলামেলা পরিবেশ দেওয়া উচিত। দল কোনও ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন ধরে একই পদে বহাল রাখতে পারে না। দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে রাহুল গান্ধিকে দলের অভ্যন্তরে লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটাতে হবে। লড়াকু বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। আপনার মধ্যে লড়াকু বাহিনী গড়ে তােলার দৃঢ় মনােভাব রয়েছে। আপনাকে সুদৃঢ়, সর্বজনগ্রাহ্য ও প্রভাবশালী দল গড়ে তুলতে হবে’।

সম্প্রতি একটি রিপাের্টে প্রকাশিত হয়েছে, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন লােকসভা নির্বাচনে দলের পরাজয়ের দায় কোনও নেতা নিচ্ছেন না। তারপর মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ।

দলের হাইকম্যান্ডের তরফে যদিও তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মধ্যপ্রদেশে ২৯টা লােকসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেস একটা আসন পেয়েছে। লােকসভা ভােটে দলের পরাজয়ের দায় নিচ্ছি। রাহুল গান্ধি সঠিক বলেছেন। আমি জানি না দলের পরাজয়ের দায় কার, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, মধ্যপ্রদেশে দলের পরাজয়ের দায় আমার। সেকারণে পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমি এটা জানি না আর কেউ দায়ি কিনা’।

মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা ও কিষাণ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান নানা পাটোলেও ইস্তফা দিয়েছেন। গত মাসে ৩০০ জন কংগ্রেস নেতা পদত্যাগ করার কয়েক ঘন্টার মধ্যে মধ্যপ্রদেশে দলের ইনচার্জ দীপক বাবারিয়া ও গােয়ার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গিরিশ চোরাঙ্কর ইস্তফা দেন। লােকসভা নির্বাচনে ৫২টি আসনে কংগ্রেস জয়ী হয়েছে, ২০১৪ সালের থেকে মাত্র ছ’টি আসন বেশি পেয়েছে।