রাহুল আবার বিদেশে, তাহলে বিজেপির মোকাবিলায় কংগ্রেসের নেতৃত্ব কে দেবে?

রাহুল গান্ধি সত্যি সত্যি কি ভারতীয় রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী? যদি আগ্রহী হন তাহলে তিনি এত ঘনঘন বিদেশ যান কেন?

এই সপ্তাহে আবার প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি ব্যক্তিগত সফরে ইউরোপ চলে গিয়েছেন এবং দলীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রবিবার তিনি ফিরে আসবেন।

প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক যে যখন ভারতীয় রাজনীতি এইরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং গোয়াতে কংগ্রেসের ভাঙ্গন প্রায় অনিবার্য আর বিজেপি সেই ভাঙন ঘটাতে মরিয়া, ঠিক তখনই সোনিয়া গান্ধির পুত্র দেশের চেয়ে বিদেশে কেন সময় ব্যয় করছেন?


রাহুল গান্ধির বয়স ৫০ পেরিয়ে গিয়েছে আর তাঁকে যুবনেতা বা অপরিণত বলা যাবে না তাহলে কি ধরে নেওয়া ভালো অনেকেই যেটা বলে থাকেন, সেটাই সত্যি যে রাহুল গান্ধির আসলে রাজনীতি নিয়ে কোনও আগ্রহ নেই?

সপ্তাহে বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের পরবর্তী সভাপতি নির্বাচন এবং তার প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের দিন নির্ধারিত রয়েছে।

একই সঙ্গে কংগ্রেস অক্টোবর মাস থেকে গোটা দেশ জুড়ে যে পদযাত্রার কর্মসূচি নিয়েছে, তারও চূড়ান্ত রূপরেখা ওই বৃহস্পতিবারের বৈঠকেই হবে।

এই কোনও বৈঠকেই রাহুল গান্ধি থাকবেন না। অথচ সবাই জানে কংগ্রেসের মধ্যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাঁর অনুমোদন ছাড়া নেওয়া যায় না।

তাহলে যিনি অনুপস্থিত, তিনি কোন বলে কংগ্রেসের মতো সুপ্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী হন?

সবাই জানেন রাহুল গান্ধি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরা চাননি বলেই শেষ পর্যন্ত প্রশান্ত কিশোরকে কংগ্রেসের নেওয়া যায়নি, প্রশান্ত কিশোর নিজের মতো করে বিহার থেকে তাঁর রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করেছেন।

কিন্তু প্রশান্ত কিশোর থেকে শুরু করে হিমন্ত বিশ্বশর্মারা যে বলেন, রাহুলের রাজনীতি বা আসলে ভারতবর্ষে কি হচ্ছে তা নিয়েই কোনও আগ্রহ নেই সেটাই কি তাহলে সত্যি?

যাঁরা বিজেপির কট্রোর বিরোধী বলে পরিচিত এবং যাঁরা মনে করেন যে কংগ্রেস পুনর্জ্জীবিত না হলে ভারতবর্ষে বিজেপিকে প্রতিরোধ করা বা অতি দক্ষিণপন্থী শক্তিকে মোকাবিলা করা কঠিন, তাঁরাও রাহুল গান্ধির এই ধরনের আচরণে তিতিবিরক্ত হয়ে গিয়েছেন।

বিশিষ্ট ঐতিহাসিক এবং গান্ধিবাদী তাত্ত্বিক রামচন্দ্র গুহ কিছুদিন আগে একটি লেখায় লিখেছিলেন, যদি কংগ্রেসের এবং নিজেদেরও ভালো চান, তাহলে অবিলম্বে রাহুল গান্ধির কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্ত রকম সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত।

কিন্তু যে যাই বলুন, রাহুল গান্ধী তাঁর এই পারিবারিক উত্তরাধিকার, বা যাকে হয়তো তিনি ‘পারিবারিক জমিদারি মনে করেন, তা ছাড়বেন না, আবার সেটা ভালো করে চালাবেনও না।

এই ২০২২ সালের গোড়ায় রাষ্ট্র গান্ধি ইউরোপে ছিলেন সেই জন্য পাঞ্জাবে কংগ্রেসের প্রচার অভিযান দেরিতে শুরু হয়।

তারপরে তিনি বন্ধু সাংবাদিকের বিয়ের আমন্ত্রণ রক্ষা করতে কাঠমান্ডু গিয়েছিলেন, যেখানে নাইটক্লাবে তাঁর ছবি প্রকাশ করে বিজেপি কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেছিল।

এরপরে আবার তিনি ইংল্যান্ড যান বিভিন্ন আলোচনা সভায় যোগ দিতে এবং সেটাও রাজ্যসভার গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে।

আমাদের মনে রাখতে হবে রাজ্যসভার ওই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে ক্রস ভোটিংয়ের জন্য দিল্লির পাশের রাজ্য হরিয়ানায় রাহুলেরই ঘনিষ্ঠ নেতা অজয় মাকেন হেরে যান।

রাজ্যসভা নির্বাচন থেকেই মহারাষ্ট্রেও টানাপোড়েন শুরু হয় যার জেরে তারপরে উদ্ধব ঠাকরের জোট সরকার পড়ে যায়।

প্রথম ছয় মাসে তিনবার বিদেশ সফরের পরও জুলাইয়ের মাঝামাঝি আবার ব্যক্তিগত সফরে রাহুল গান্ধি বিদেশে।

তাহলে নরেন্দ্র মোদি অমিত শাহের মতো যাঁরা ২৪ ঘন্টা রাজনীতি করেন, তাঁদের মোকাবিলা রাহুল গান্ধী বা তাঁর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস কি করে করবে? সমস্যা হচ্ছে গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে এখনো একমাত্র কংগ্রেসের কাছে কুড়ি শতাংশের কাছাকাছি ভোট রয়েছে অন্য বিরোধী দলগুলি সবাই আঞ্চলিক, নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট রাজ্যে সীমাবদ্ধ।

যে দলের কাছে সর্বভারতীয় স্তরে ২০ শতাংশ ভোট রয়েছে, সেই দলের সর্বোচ্চ নেতা যদি এতটাই রাজনীতিতে অমনোযোগী হন, তাহলে আমাদের মানে, যাঁরা একটি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষে থাকব বলে আশা করি, তাঁদের কি হবে? এই সিদ্ধান্ত বোধহয় ভারতবর্ষের জনগণকেই নিতে হবে।