‘ভোটচুরি’ নিয়ে ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন রাহুল গান্ধী। এবার সরাসরি মুখ্য নির্বাচনী কমিশনারকে নিশানা করে ৬ হাজারেরও বেশি ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, পরিকল্পনামতো নির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্রে বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, কোথাও আবার অবৈধ ভাবে ভোটারদের নাম ঢোকানো হচ্ছে। যদিও তাঁর অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে নস্যাত করেছে নির্বাচন কমিশন। সমাজ মাধ্যমে একটি পোস্টে কমিশন জানিয়েছে, ‘রাহুল গান্ধীর করা অভিযোগগুলি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। অনলাইনে কোনও ভোটারের নাম বাদ দেওয়া যায় না। রাহুল গান্ধী বিভ্রান্ত করছেন।’
বৃহস্পতিবার ভোটচুরি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাহুল গান্ধী। বৈঠকে মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি লোকসভার বিরোধী দলনেতা। হালকা করে নয়, আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। যাঁরা দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছেন, মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার তাঁদের রক্ষা করছেন।’ এদিন রাহুল সাংবাদিকদের কাছে ২০২৩ সালের কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের তথ্য তুলে ধরেন। এই রাজ্যের আলন্দ বিধানসভায় কেউ ৬ হাজার ১৮টি নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি ধরা পড়ে যান।
সেখানে উপস্থিত বিএলএ খেয়াল করেন, তাঁর আত্মীয়ের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। তাই তিনি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। রাহুলের অভিযোগ, নির্দিষ্ট সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না ২০২৩ সালের ভোটে ঠিক কতজনের নাম বাদ গিয়েছে। কিন্তু সংখ্যাটা অবশ্যই ৬ হাজার ১৮-র বেশি হবে।’ মঞ্চের পিছনে থাকা স্ক্রিনে কয়েকটি ফোন নম্বর তুলে ধরে রাহুল দাবি করেন, বিভিন্ন রাজ্য থেকে ফর্ম ভর্তি করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। কীভাবে ওই নম্বরগুলি থেকে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড তথা ওটিপি দেওয়া সম্ভব হল, সেই প্রশ্ন তোলেন রাহুল।
এই অভিযোগের পরিপেক্ষিতেই রাহুল নির্বাচন কমিশন এবং দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে নিশানা করেন। রাহুল বলেন, ‘দেশে স্বচ্ছ এবং অবাধ নির্বাচনের বিষয়টি সুনিশ্চিত করার বদলে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে নির্বাচন কমিশন। যাঁরা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে খর্ব করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ একই সঙ্গে রাহুলের সংযোজন, ‘জ্ঞানেশ কুমারজি ভোট চুরিকে রক্ষা করছেন। এটা নিয়ে এখন আর কোনও সংশয় নেই।’ রাহুলের দাবি, ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার কাজটি করেছিল অন্য একটি দল। তারা কংগ্রেস ভোটারদের নিশানা করেছিল। নির্দিষ্ট কয়েকটি বুথকে টার্গেট করা হয়েছিল যেখানে কংগ্রেসের জেতার সম্ভাবনা ছিল।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন জানিয়েছে, নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা না বলে ভোটার বাতিল করা হয় না। ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে হলে সেই ব্যক্তিকে অন্তত একবার তাঁর আবেদন জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।
তবে নির্বাচন কমিশন স্বীকার করেছে, কর্ণাটকের আলন্দ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটারদের নাম মুছে ফেলার কিছু ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয়েছিল। বিষয়টি তদন্তের জন্য নির্বাচন কমিশন নিজেই একটি এফআইআর দায়ের করেছে। যদিও রাহুল অভিযোগ করেছেন, এই বিষয়ে সিআইডি তদন্তে সহযোগিতা করছে না কমিশন।
কংগ্রেস সাংসদের অভিযোগ, ‘গত ১৮ মাসে সিআইডি নির্বাচন কমিশনকে ১৮টি চিঠি পাঠিয়েছে, যেখানে অভিযুক্তদের সফ্টওয়্যার, ফোন নম্বরের আইপি অ্যাড্রেস এবং ওটিপির বিবরণ চাওয়া হয়েছিল। কমিশন ওই বিবরণ দিচ্ছে না।’ রাহুল বলেন, ‘কারণ কান টানলে মাথা আসবে!’