‘ভোর ৪টেয় ঘুম থেকে উঠুন। ভোটারদের নাম মুছে দিন। ফিরে গিয়ে শুয়ে পড়ুন। পুনরাবৃত্তি করুন।’ শুক্রবার একটি পোস্টে ভোটারদের নাম অবৈধভাবে মুছে ফেলার অভিযোগে ফের সরব হন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর মতে, এভাবেই ভোট চুরির ঘটনা ঘটে চলেছে। রাহুল গান্ধীর আরও দাবি, নির্বাচন কমিশন ভোট চোরদের রক্ষা করছে। এক্ষেত্রে রাহুলের নিশানায় যে বিজেপির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাহুল গান্ধীর ভোটচুরির অভিযোগকে বৃহস্পতিবারই ভিত্তিহীন ও মিথ্যে বলে নস্যাত করেছে নির্বাচন কমিশন। তার পরেও ফের ভোটচুরির অভিযোগ করেছেন রাহুল। বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি ভোটচুরির জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করেন। সেই অনুষ্ঠানের একটি ছোট ভিডিও শুক্রবার নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন। রাহুল পোস্টে লেখেন, ‘ভোর ৪টেয় ঘুম থেকে উঠুন, ৩৬ সেকেন্ডের মধ্যে ২ জন ভোটারকে মুছে ফেলুন, তারপর আবার ঘুমাতে যান-এভাবেই ভোট চুরি হয়েছে! নির্বাচনী পর্যবেক্ষক জেগে থাকতেন, চুরির দিকে নজর রাখতেন এবং চোরদের রক্ষা করে যেতেন ‘, টুইট করেন রাহুল।
তাঁর দাবির সমর্থনে গান্ধী তিনটি কেস স্টাডির উদ্ধৃতি দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নাগরাজ নামে এক ব্যক্তির ঘটনা ছিল। গান্ধী তাঁর উপস্থাপনায় দেখিয়েছেন যে, নাগরাজ ৩৬ সেকেন্ডের মধ্যে ভোটারদের নাম মুছে ফেলার জন্য দুটি আবেদন জমা দিয়েছেন। ‘৩৬ সেকেন্ডের মধ্যে দুটি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছিল। দয়া করে এই ফর্মগুলি পূরণ করার চেষ্টা করুন এবং দেখুন যে এতে আপনার কত সময় লাগে। এটি ম্যানুয়ালি অসম্ভব।’ রাহুল বলেন, এটি অটোমেশনের মাধ্যমে করা হয়েছিল।
ভোটচুরিকেই এবার হাতিয়ার করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী।কংগ্রেস নেতার অভিযোগ, নির্বাচনী নজরদারেরা চুরির দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন এবং চোরেদের রক্ষা করেছেন! বৃহস্পতিবার রাহুল অভিযোগ করেন, সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যথাক্রমে কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্রে ভোটারদের অবৈধভাবে মুছে ফেলা এবং যুক্ত করা হয়েছিল। কর্ণাটকের মামলার কথা উল্লেখ করে বিরোধী দলনেতা দাবি করেন, ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে আলন্দ আসনে ভোটার তালিকা থেকে ৬ হাজারেরও বেশি নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।যদিও নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
তবে শুধু ভোটচুরির অভিযোগই নয়, কী ভাবে এর প্রতিরোধ করা যায় তা-ও বলেছেন রাহুল। শুক্রবার আরও একটি পোস্টে কংগ্রেস নেতা দাবি করেন, ‘ভোটচুরি’ রুখতে এগিয়ে আসতে হবে ভারতের তরুণ প্রজন্ম তথা জেন-জি দের। রাহুলের আশা, গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারেন একমাত্র তাঁরাই। রাহুল পোস্টে লেখেন, ‘দেশের যুবসমাজ, ছাত্রছাত্রী এবং জেন-জি-রাই সংবিধান ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করবেন, এবং ভোটচুরি বন্ধ করবেন। আমি সবসময় তাঁদের পাশে থাকব।’
বৃহস্পতিবারই রাহুলের ‘ভোটচুরি’র অভিযোগের জবাব দেয় নির্বাচন কমিশন। রাহুলের অভিযোগকে ‘ভুল এবং ভিত্তিহীন’ বলে খারিজ করে দেয় তারা। তাদের বক্তব্য, অনলাইনে কেউ কোনও ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। কারও নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয় বলেও জানায় কমিশন। তবে কমিশন এ-ও জানায়, কর্নাটকের যে বিধানসভা কেন্দ্রের কথা রাহুল বলেছেন, সেখানে ২০২৩ সালে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়। তবে সেই চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি।
কংগ্রেসও ভোটার জালিয়াতির অভিযোগের বিরুদ্ধে একটি স্বাক্ষর প্রচারাভিযান শুরু করেছে। দল শুক্রবার একটি ভিডিও পোস্ট করেছে যেখানে সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে এই উদ্যোগকে সমর্থন করতে দেখা গিয়েছে।
তবে, নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীর দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছে যে, ভোটার অনলাইনে মুছে ফেলা যাবে না। নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুনানির সুযোগ না দিয়ে অপসারণ করা যায় না।
রাহুলের নতুন অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। সাংসদ নিশিকান্ত দুবের দাবি, পরিবারতন্ত্রের রাজনীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় ভাবে দাঁডিয়েছে দেশের তরুণ প্রজন্ম।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর দাবি, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে। একাধিক নির্বাচনে হারতে হয়েছে হাত শিবিরকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন করতে এগিয়ে এসেছে ভারতের তরুণ প্রজন্ম ।