ইন্ডিগো বিমান বিভ্রাট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা

ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবা ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরলেও শনিবারও ব্যাহত উড়ান। এদিনও বেশ কিছু বিমান বাতিল করা হয়েছে বলে খবর। শনিবার দিল্লির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিমান পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার কথা জানিয়েছে। বিমান যাত্রীদের অসুবিধা দূর করতে দেশ জুড়ে ৩৭টি ট্রেনে অতিরিক্ত ১১৬টি কামরা যুক্ত করেছে রেল।

বিমান বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে ইতিমধ্যেই উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ডিজিসিএ। অন্যদিকে কেন্দ্রের অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী কে রামমোহন নায়ড়ু এই বিভ্রাটের জন্য দায়ীদের মূল্য চোকাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে নায়ডু জানিয়েছেন, ‘আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। কোথায় গলদ  এবং তার জন্য কে দায়ী, ওই কমিটি তা খতিয়ে দেখবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাই যাঁরা ইন্ডিগো বিভ্রাটের জন্য দায়ী, তাঁদের এর জন্য মূল্য চোকাতে হবে।‘

অন্যদিকে ইন্ডিগোর উড়ান বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের স্বার্থ রক্ষায় সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছে ‘ইন্ডিগো অল প্যাসেঞ্জার অ্যান্ড অ্যানাদার’। দেশের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তকে এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করার আবেদন করা হয়েছে। বিমান মন্ত্রক এবং  ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-কে স্টেটাস রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার কথাও আবেদনে বলা হয়েছে। মামলার দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়েছে।


ডিজিসিএ ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, নতুন পাইলট ডিউটি-আওয়ার নিয়ম কার্যকর করার ক্ষেত্রে ইন্ডিগোর গণনায় ভুল এবং পরিকল্পনায় ঘাটতি থেকেই এই ব্যাপক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। সংস্থার প্রয়োজনীয় পাইলট-সংখ্যা সঠিকভাবে অনুমান করতে না পারাই সংকটকে চরমে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু গোটা ঘটনার জন্য বিমান সংস্থাকেই দায়ী করেছেন। সমস্যার উৎস হিসেবে ইন্ডিগোকেই দায়ী করেছেন তিনি। অন্য কোনও এয়ারলাইন্সে সঙ্কট হয়নি বলেও জানান তিনি। নতুন ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন বা এফডিটিএল নির্দেশিকা জারি হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে। স্পাইসজেট, এয়ার ইন্ডিয়া, ভিস্তারা মতো সংস্থায় কোনও সমস্যা হয়নি বলেও জানান বিমানমন্ত্রী।

ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স ইতিমধ্যে ক্ষমা চেয়ে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন।  ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বলে জানিয়েছেন। এলবার্স আরও জানান, ইন্ডিগোর বিশাল নেটওয়ার্ক, সিডিউল এবং ক্রু–অপারেশনের জটিলতা বিবেচনা করলে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে।

বিমান পরিষেবা এবং যাত্রীসংখ্যার নিরিখে ইন্ডিগো দেশের বৃহত্তম বিমানসংস্থা। সেই সংস্থার পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছিলেন লক্ষ লক্ষ যাত্রী। শুক্রবার ১০০০-এরও বেশি এবং বৃহস্পতিবার মোট ৫৫০টি বিমান বাতিল করেছিল ইন্ডিগো। যাত্রীদের যথাযথ খাবার এবং আশ্রয় ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিমান ছাড়ার নির্দিষ্ট সময়ও জানানো হচ্ছে না বলে দাবি করা হয়েছে।

ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার জন্য কেন্দ্রের একটি বিধিকে দায়ী করা হয়। ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশলস বলা হয়েছিল প্রতি সপ্তাহে পাইলট এবং বিমানকর্মীদের বিশ্রামের জন্য ৪৮ ঘণটা সময় দিতে হবে। পাইলট এবং বিমানকর্মীদের সপ্তাহে একবারই পর দু’দিন নাইট ডিউটি দেওয়ার কথা বলা হয়। ২০২৪ সালের জুনেই এই বিধি কার্যকর করার কথা ছিল।

বিমানসংস্থাগুলির অনুরোধে তা বার বার পিছিয়ে যায়। সম্প্রতি নতুন বিধি কার্যকর করার জন্য ডিজিসিএ-কে নির্দেশ দেয় দিল্লি হাই কোর্ট। জুন এবং নভেম্বরে দুই দফায় ধাপে ধাপে নির্দেশিকায় থাকা নিয়মাবলি কার্যকর করার পথে হাঁটে ডিজিসিএ। ইন্ডিগোর বিমান বিভ্রাটের জেরে এই নিয়ম থেকে পিছু হটতে বাধ্য হল কেন্দ্র। তাৎক্ষণিক ভাবে ছুটি নিয়ে নিয়ম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নাইট-টাইম ফ্লাইটএর ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হয়েছে।

তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পাইলটদের একটি সংগঠন। এয়ারলাইন্স পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন নামে  সংগঠনটি শুধুমাত্র ইন্ডিগোকেই সুবিধা করে দিতে নিয়মবিধি শিথিল করা হয়েছে কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।  এর ফলে লক্ষ লক্ষ যাত্রীকে ঝুঁকির মুখে ফেলা হচ্ছে বলে দাবি করেছে ওই সংগঠনটি। উল্লেখ্য, এর আগে পাইলটদের এই সংগঠনটিই অভিযোগ করেছিল, বিধি শিথিল করতে কেন্দ্রকে বাধ্য করার কৌশল নিয়েছিল ইন্ডিগো। সেই কারণেই বিমান পরিষেবা ব্যাহত হলেও ইন্ডিগো কোনও কার্যকর পদক্ষেপ করেনি বলে দাবি তাদের।

ইন্ডিগোর বিমান বাতিলের জেরে দেশজুড়ে টিকিটের দামও অত্যাধিক হারে বেড়েছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে টিকিটের সাধারণ দামের তুলনায় কখনও দ্বিগুণ, কখনও তিনগুণ টাকা দিয়ে বিমানের টিকিট বুক করেছেন। এ বার সেই মাত্রাছাড়া দামে লাগাম পরাতে আসরে নামল কেন্দ্রীয় সরকার। যাত্রীদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানো যাবে না বলে জানিয়েছে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক। প্রস্তাবিত নিয়মের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিললে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। যতদিন না দেশে বিমান পরিষেবা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এই নির্দেশিকা কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রক।