নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চক্রান্ত করেই বিহারে বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া অর্থাৎ স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) শুরু করেছে বিজেপি। এই কথা বলে এবার সরব হয়েছেন জন সুরজ দলের প্রতিষ্ঠাতা তথা ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। এই ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে সুর মিলিয়েছেন তিনি। বিহারের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা কিশনগঞ্জে দাঁড়িয়ে সম্প্রতি প্রশান্ত দাবি করেছেন, বিজেপি ষড়যন্ত্র করে এসআইআর করিয়েছে।
প্রশান্তের প্রশ্ন, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা ভুয়ো হলে নরেন্দ্র মোদী কীভাবে প্রধানমন্ত্রী হলেন? গত লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত ভোটার তালিকা নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না। হঠাৎ এখন তা সংশোধনের প্রয়োজন পড়ল কেন? তাঁর দাবি, বিহারের মানুষ এখন বিকল্প খুঁজছে। সেই কারণে বিজেপি ভয় পেয়ে ভোটারদের নাম কেটে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই সব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন প্রশান্ত। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির এই পদক্ষেপ সংবিধানবিরোধী। কারণ সুপ্রিম কোর্ট আগে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নাগরিকত্ব নির্ধারণের অধিকার নির্বাচন কমিশনের নেই।
শুধু বিজেপিকেই নয়, লালু প্রসাদের দল আরজেডিকেও কটাক্ষ করেছেন প্রশান্ত কিশোর। তাঁর দাবি, আরজেডি মুসলিমদের ব্যবহার করেছে। সেই অপমান মেনে নেবে না সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে প্রশান্ত বলেছেন, বিহারের নাগরিকরা মন্দিরের জন্য মোদীকে ভোট দিয়েছেন, যা এখন তৈরি হয়ে গিয়েছে। জাতির নামে ভোট দেওয়ার পর নীতীশ কুমার জাতি গণনা করিয়েছেন। মোদী বিহারের মানুষের ভোট নিয়ে এবং দেশজুড়ে টাকা নিয়ে গুজরাতে কারখানা স্থাপন করছেন। তাঁর আর্জি, নেতাদের মুখ দেখে ভোট না দিয়ে, বরং শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের জন্য ভোট দিন।
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের প্রতিটি পুরুষ এবং মহিলাকে মাসিক দুই হাজার টাকা পেনশন দেওয়া হবে। যতক্ষণ না সরকারি বিদ্যালয়গুলির উন্নতি হবে, ততক্ষণ ১৫ বছরের কম বয়সের শিশুদের বেসরকারি স্কুলে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। তাদের স্কুলের ফি দেবে সরকার।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জন সুরজ দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর সহ একাধিক বিরোধী দলের নেতারা বিহারে হওয়া এসআইআর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে এর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দাখিল করেছে নির্বাচন কমিশন। তাদের দাবি, ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে এই বিশেষ সংশোধন শুরু করা হয়েছে। আজ, সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
উল্লেখ্য, আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রথম ধাপে ৬৬ লক্ষ নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। এর মধ্যে মৃত, স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত ও দ্বৈত ভোটাররা রয়েছে। এই প্রক্রিয়াকে ঘিরে নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু তুলেছেন বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে এসআইআর নিয়ে মামলার শুনানিতে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দেয় সেই দিকে তাকিয়ে সরকার, বিরোধী সব পক্ষ।