বিহার বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের কারিগর হতে পারেন পরিযায়ী শ্রমিকরাই। এমনই রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করে বিতর্কের সৃষ্টি করলেন জনসুরাজ দলের মুখ্য প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর। তাঁর বক্তব্য, এ বার ভোটের আসল নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠবেন এই শ্রমিকরা, যাঁরা সারা বছর রাজ্যের বাইরে কাজ করলেও নির্বাচনের সময়ে বিহারে ফিরে এসে ভোট দেন।
পাটনার এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রশান্ত কিশোর বলেন, ‘বিহারের সমাজ, অর্থনীতি থেকে রাজনীতি— সব ক্ষেত্রেই পরিযায়ী শ্রমিকদের অবদান অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক গুরুত্ব সব সময় কম করে দেখা হয়। অথচ এই শ্রমিকরাই আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বড় নিয়ন্ত্রক শক্তি।’ তাঁর মতে, পরিযায়ী শ্রমিকদের অসন্তোষ, সুযোগের অভাব, কর্মসংস্থানের সংকট— সব মিলিয়ে তাঁদের ভোট প্রদানে বড় পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
বিহারে প্রায় কোটি কোটি শ্রমিক সারা বছর মেট্রো শহর ও শিল্পাঞ্চলে কাজ করেন। নির্বাচন এলেই অনেকে বাড়ি ফিরে আসেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে একই সমস্যায় জর্জরিত। রাজ্যে পর্যাপ্ত কাজ, শিল্প বা পরিকাঠামোর সুযোগ নেই। প্রশান্ত কিশোরের দাবি, ‘এই বঞ্চিত মানুষেরা এবার ভোটের বাক্সে নিজেদের শক্তি দেখাবেন।’
বিরোধী দলগুলির মতে, প্রশান্ত কিশোরের মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিজেপি ও মহাগঠবন্ধন উভয় শিবিরই মনে করছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের মন জয় করতে ব্যর্থ হলে ফলাফল বড় মোড় নিতে পারে। শ্রমিকদের আয়ের অনিশ্চয়তা, সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম এবং দুর্বল সামাজিক সুরক্ষা— এ সবই যে ভোটের ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা নেবে, তা পরিষ্কার করে দিলেন প্রশান্ত কিশোর।
অন্যদিকে, শাসকদল প্রশান্ত কিশোরের মন্তব্যকে ‘সরাসরি ভোট পাওয়ার কৌশল’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, বিহারে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উন্নয়নের গতি বেড়েছে এবং বহু প্রকল্পের সুফল শ্রমিক পরিবারগুলি পেয়েছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতামত অন্য কথা বলছে। তাঁরা মনে করছেন, যে রাজ্যের সবচেয়ে বড় শ্রমশক্তি রাজ্যের বাইরেই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে, তাঁদের ক্ষোভই এ বার বিহারের ভোটের ফলাফলে বড় ভূমিকা নিতে পারে। প্রশান্ত কিশোরের মন্তব্য সেই বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে দিল।