বিতর্কিত মন্তব্যে প্রতিরক্ষা কমিটি থেকে অপসারিত সাধ্বী প্রজ্ঞা

সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর (Photo: IANS)

নাথুরাম গডসেকে দেশভক্ত বলায় শাস্তির মুখে পড়তে হল মালেগাঁও বিস্ফোরণে অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরকে। সংসদে দাঁড়িয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় প্রতিবাদে সােচ্চার হয়েছিল বিরােধীরা। চাপের মুখে প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হয়। তাঁকে অপসারিত করা হয়েছে প্রতিরক্ষা কমিটি থেকে। এই মন্তব্যের কড়া নিন্দা করেছে বিজেপি।

সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করা হয়েছিল প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরকে। গডসে নিয়ে মন্তব্য করায় বৃহস্পতিবার সেই পদ থেকে তাঁকে অপসারিত করার প্রস্তাব করেন বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জে পি নাড্ডা। এছাড়াও তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে অধিবেশন চলাকালীন বিজেপির সংসদীয় বৈঠকেও যােগ দেবেন না ঠাকুর’।

এর আগে ভােটের প্রচারে একই মন্তব্য করেছিলেন সাধ্বী প্রজ্ঞা। বুধবার সংসদের নিম্নকক্ষে এসপিজি বিল নিয়ে আলােচনার সময় তিনি ফের বলেন, ‘নাথুরাম গডসে একজন দেশভক্ত’। অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধির হত্যাকারী একজন দেশপ্রেমিক। স্পিকার তাঁর এই কথা কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিয়ে দেন। যদিও প্রজ্ঞার দাবি, তিনি ‘দেশভক্ত’ উধম সিংকে বলেছেন, গডসেকে নয়।


একথা শুনে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েন বিরােধীরা। কংগ্রেস বলে, অত্যন্ত নিন্দনীয় মন্তব্য। দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে যান বিজেপি সাংসদরা।

বুধবার লােকসভায় এসপিজি বিল বিতর্কের সময় বলতে ওঠেন ডিএমকে’র এ রাজা। তিনি গডসের একটা মন্তব্য তুলে ধরে বলেন, ‘গডসে কেন গান্ধিকে হত্যা করেছিল, তা সে নিজেই বলে গেছে’। তাঁর বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই থামিয়ে দেন প্রজ্ঞা। বলেন, ‘অপনি একজন দেশভক্তের উদাহরণ এক্ষেত্রে দিতে পারেন না’।

রাজা পাল্টা বলেন, ‘গডসে নিজেই বলেছে তার গান্ধির উপর রাগ ছিল। সেই রাগ সে ৩২ বছর ধরে পুষে রেখেছিল। গডসে গান্ধিকে হত্যা করেছিল, কারণ গডসে একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শের সমর্থক।

এতে দু’পক্ষে প্রবল তর্ক বেধে যায়। বিরােধীরা প্রজ্ঞার নিন্দা করতে থাকেন। এই সময় কিছু বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞাকে বসে পড়তে বলেন। অবশেষে তিনি রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হন। পরে জানান, তিনি এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার জবাব দেবেন। হুমকির সুরে বলেন, ‘কী বলেছি ভালাে করে শুনুন। আমি উধম সিংকে দেশপ্রেমিক বলেছি’। তবে প্রজ্ঞা কী বলেছেন তা টিভির দৌলতে সকলেই জেনে গেছেন ততক্ষণে।

লােকসভা নির্বাচনের প্রচারে ভােপালে গিয়ে তাকে ‘প্রকৃত দেশপ্রেমিক’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছিলেন, নাথুরাম গডসেজি দেশভক্ত থে, হায় ওউর রহেঙ্গে। ওঁকে যারা সন্ত্রাসবাদী বলেন, তারা নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখুক। নির্বাচনেই তারা উত্তর পাবেন। প্রজ্ঞা ভােপাল থেকে সেই নির্বাচনে জিতে যান। এই মন্তব্য নিয়ে যখন রাজনীতি তােলপাড় হচ্ছে, তখন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কথায় প্রজ্ঞা ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন।

লােকসভা নির্বাচনের ওই ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি বলেছিলেন, ‘গান্ধিজি ও নাথুরাম গডসেকে নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে তা অত্যন্ত কুরুচিকর ও সমাজের জন্য ভুল বার্তা। উনি (পরে) ক্ষমা চেয়েছে ঠিকই, কিন্তু ওকে আমি কোনও দিনই পুরােপুরি ক্ষমা করে দিতে পারব না’।