তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করেছে উত্তর ভারতে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাতাসে বাড়ছে দূষণের মাত্রা। রবিবার সকালে রাজধানীর এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই ছুঁয়েছে ৪০০। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে দৃশ্যমানতা কমেছে। কুয়াশায় ঢেকেছে রাস্তা। দূষণের এই ছবি দেখে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা অক্ষরধামের।
সেখানে বাতাসের গুণগত মান বা একিউআই পৌঁছেছে ৪২৬-এ। যা ক্যাটাগরি অনুসারে ‘গুরুতর’। অন্যদিকে সিপিসিবির তথ্য অনুসারে আনন্দ বিহারে তা ৪১৮। পাশাপাশি বারাপুলায় তা ২৯০। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইন্ডিয়া গেটের সামনে জলকামান রাখা হয়েছে। রবিবার সকালে সেখানে দূষণের মাত্রা ২৬৯। তথ্য অনুযায়ী, ১৪ অক্টোবর থেকে দূষণের মাত্রা ক্রমশই বাড়ছে। আগামিকাল তা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার দিওয়ালি। নিষেধাজ্ঞা, প্রশাসনিক নজরদারির পরও উৎসব উপলক্ষে বাজি পুড়বে দিল্লিতে। ফলে দূষণ যে মাত্রা ছাড়াবে, সে কথা বলাই বাহুল্য। তবে তার আগেই রীতিমতো ভয় ধরাচ্ছে দিল্লির একিউআই। দূষণ পর্ষদের তথ্য অনুসারে শনিবার দিল্লির গড় একিউ আই ছিল ২৬৮। দিল্লিতে দূষণ পর্ষদের ৩৮টি মনিটরিং স্টেশনের মধ্যে ন’টি স্টেশনেরই একিউআই পেরিয়েছে ৩০০-র সীমা। শনিবার আনন্দ বিহারের একিউআই ছিল ৩৮৯, ওয়াজ়িরপুরে ৩৫১, জাহাঙ্গিরপুরী ও দ্বারকাতে ৩১০।
দিল্লিতে দূষণের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল পাঞ্জাব-হরিয়ানায় ফসলের গোড়া পোড়ানো। শীতের শুরুতে ফসল কাটার পরে ফসলের অবশিষ্ট অংশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। তা থেকে ব্যাপক পরিমাণে দূষণ হয়। এ ছাড়া গাড়ি চলাচলের কারণেও দূষিত হয় বাতাস। সরকারি সূত্রে খবর, শনিবার দিল্লির দূষণের ১৫ শতাংশেরও বেশি যানবাহনের ধোঁয়া থেকেই হয়েছে।
অন্যদিকে, দিল্লির আবহাওয়ার অবস্থাও কয়েকদিন ধরে একই রকম রয়েছে। দিনের তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১ ডিগ্রি কম। রাতের তাপমাত্রাও কয়েকদিন ধরেই ১৯ ডিগ্রির আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। মেঘমুক্ত আকাশে এবং আগামী কয়েকদিন দিল্লিতে বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রায় নেই বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। তার ফলে দূষণও আরও বাড়ার আশঙ্কা। দৃশ্যমানতাও উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকবে। এখনই ভোরের দিকে হালকা কুয়াশায় ঢেকেছে দিল্লি। ঠান্ডা বাড়লে ধোঁয়াশা আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে দিল্লিতে।
প্রসঙ্গত গত বছর শীতে, ধোঁয়াশার জেরে দিল্লি-সহ গোটা উত্তর ভারতে বারবার ব্যাহত হয়েছিল বিমান ও রেল পরিষেবা। বহু বিমানের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়। রেল পরিষেবাতে প্রভাব পড়েছিল। এবারও পরিস্থিতি সে রকমই হবে না তা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। গতবার দিল্লির বাতাসের গুণমান ‘গুরুতর’ পর্যায় পৌঁছে গিয়েছিল। এরপরই গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান-৩ চালু করে প্রশাসন।
অনলাইনে স্কুল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজধানীর সড়কে বিএস ৩-এর নীচে থাকা পেট্রল গাড়ি, বিএস ৪-এর নীচে থাকা ডিজেল গাড়ি এবং পণ্যবাহী মাঝারি আকারের যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজধানী দিল্লি-সহ গোটা উত্তর ভারত পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ শস্যের গোড়া পোড়ানো। দিওয়ালিতে বাজি ফাটানোর সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ফাটানো যাবে সবুজ বাজি। বাজি ফাটানোর সময়সীমা সকাল ৬টা থেকে ৮টা এবং সন্ধে ৮টা থেকে ১০টা।