দীপাবলির আগেই রাজধানী দিল্লির দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি, সতর্কতা জারি

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

শীতের মরসুম প্রায় এসে গিয়েছে। রাজধানীর বাতাসে দূষণের মাত্রা বা একিউআই ক্রমশ বাড়ছে। মঙ্গলবার চলতি মরসুমের প্রথম ‘খারাপ’ একিউআই রেকর্ড হওয়ার পর বুধবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। দীপাবলির মাত্র এক সপ্তাহ বাকি থাকায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

মঙ্গলবার দিল্লিতে একিউআই ২১১ রেকর্ড করা হয়েছে, যা খুবই বিপদজনক স্তরে পড়ে। রাজধানীর আকাশ ধোঁয়ার চাদরে ক্রমশ ঢাকতে শুরু করেছে। ফলে প্রশাসনের মাথায় হাত পড়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে জারি করা হয়েছে ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান-১’ বা জিআরএপি-১।

প্রসঙ্গত, এই একিউআই সূচক শূন্য থেকে ৫০ হলে তা ‘ভালো’, ৫১ থেকে ১০০ হলে ‘সন্তোষজনক’, ১০১ থেকে ২০০ হলে ‘মাঝারি’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খারাপ’, ৩০১ থেকে ৪০০ হলে ‘খুব খারাপ’, ৪০১ থেকে ৪৫০ হলে ‘ভয়ানক’ এবং ৪৫০-এর বেশি হলে ‘অতি ভয়ানক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।


রাজধানীতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি বছর নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিশেষ করে দীপাবলির সময় বাতাসের দূষণ যেন চরমে না পৌঁছয়, সে জন্য বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তাতে শব্দবাজি ও আতশবাজি বিক্রি, মজুত ও তৈরিতে নিয়ন্ত্রণ থাকে। তবে দিল্লি এবং দিল্লি এনসিআর এলাকায় ‘সবুজ আতশবাজি’ অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব বাজি বিক্রি এবং পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হল সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে। ফলে দীপাবলিতে দিল্লি-এনসিআর এলাকায় বাজি পোড়ানোয় আর কোনো নিষেধাজ্ঞা রইল না। সুপ্রিম কোর্ট থেকে যদিও বাজি পোড়ানোর নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এবং আরোপ করা হয়েছে কিছু শর্তও।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাবাই এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ জানিয়েছে যে, দিল্লি-এনসিআরে আতশবাজি পোড়ানোর অনুমতি থাকবে শুধুমাত্র ১৮ থেকে ২১ অক্টোবর—চার দিন। এই চার দিনে সকাল ৬টা থেকে ৭টা এবং রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আতশবাজি পোড়ানো যাবে। পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনকে এই বিষয়ে নজরদারি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, বেআইনিভাবে যে বিপুল পরিমাণে শব্দবাজি বিক্রি করা হয় তাতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই তুলনায় ‘সবুজ আতশবাজি’ পোড়ানো অনেক ভালো।

তবে পুলিশ কে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে যাতে ওই নির্ধারিত চার দিন বেঁধে দেওয়া সময়ের বাইরে কেউ বাজি না পোড়ায়। অর্থাৎ দিল্লি এবং দিল্লি এনসিআরের বাইরে যেন কোনোভাবেই বাজি না ঢুকতে পারে, তা পুলিশকেই নিশ্চিত করতে হবে।

বাজি পোড়ানো ছাড়াও বাজি বিক্রির উপরও নিয়ম বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বাজি ক্রয়বিক্রয়ের সময় কিউ আর কোডের মাধ্যমে টাকাপয়সার লেনদেন করতে হবে। বাজি বিক্রি করতে পারবেন একমাত্র অনুমোদিত বিক্রেতারাই। যে সময় বাজি পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, ওই সময় দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলিকে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে। পরে ওই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে রিপোর্ট জমা করতে হবে সুপ্রিম কোর্টে।

উল্লেখ্য, দিল্লি-এনসিআরে এক বছরের জন্য শব্দবাজি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে পালটা মামলা দায়ের করেছিলেন বাজি নির্মাতা এবং বিক্রেতারা। তাঁরা দাবি করেন যে, শব্দবাজি তৈরি এবং বিক্রির সঙ্গে অনেকগুলি পরিবার জড়িত রয়েছে। বাজি নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে এই পরিবারগুলি অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে পড়বে।

এদিকে দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে দীপাবলিতে সবুজ বাজি ফাটানোর অনুমোদন দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিজেপি সাংসদ মনোজ তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত, কারণ ভারতের আত্মা উৎসব, পরিবেশ, ভাষা, সংস্কৃতি ও সম্মান বজায় রাখার মধ্যে নিহিত। সব উপাদানকে সঙ্গতিপূর্ণভাবে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

তিওয়ারি মন্তব্য করেন, ‘কোনও একটি ধর্মের উৎসবের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত নয়, যখন অন্যদের ক্ষেত্রে তা নেই। কিছু মানুষ এ বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। তাই সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তে আমি সন্তুষ্ট।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত ছিলাম। এর আগে আদালতে সরকার দলীয় সুপারিশ চেয়েছিল। আম আদমির প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক হওয়ায় অনুমতি দেওয়া হয়নি। আজ যখন রেখা গুপ্তা মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন এবং আমাদের বিজেপি সরকার গঠিত হয়েছে, তখন এই অনুমোদন এসেছে।’

তবে এই নিয়ন্ত্রণের পরেও দীপাবলির পরে দূষণ কমবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।