কার্তিক মহারাজের ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপ্তি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক

ফাইল চিত্র

এবারের পদ্মশ্রী প্রাপক কার্তিক মহারাজ। মুর্শিদাবাদের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসী স্বামী প্রদীপ্তানন্দ পরিচিত কার্তিক মহারাজ নামে। এই কার্তিক মহারাজের পদ্মশ্রী প্রাপ্তি নিয়ে শুরু হয়েছে নানান বিতর্ক। এর আগেও তাঁর বিভিন্ন মন্তব্য ও কাজকর্ম নিয়ে বিতর্ক দেখা গিয়েছে। কার্তিক মহারাজ একবার বলেছিলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে জাতির জনক বলা হয়।’ স্বাভাবিকভাবেই তাঁর এই কথা থেকেই বোঝা যায়, তিনি কোন ধরনের রাজনীতির সমর্থক।

২০২৪ সালে ১৮ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে কার্তিক মহারাজের তীব্র সমালোচনা শোনা গিয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনের আগে একটি সভায় মমতা বলেছিলেন, ‘আমি সেবাশ্রমকে সম্মান করি। কিন্তু কার্তিক মহারাজ নামে এক সন্ন্যাসী তৃণমূল এজেন্টদের বসতে দিচ্ছেন না। উনি বিজেপি রাজনীতি করছেন করুন, কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে কেন?’ মমতা বলেছিলেন, ‘এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও নির্বাচনী প্রচারে কার্তিক মহারাজকে দেখা গিয়েছে।’

উল্লেখ্য, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নানা হিন্দুত্ববাদী সভা ও কর্মসূচিতে দেখা যায় কার্তিক মহারাজকে। সম্প্রতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর সেখানে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। তার জেরে মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় তীব্র হিন্দুত্ববাদী সভা করতে দেখা গিয়েছে শুভেন্দু অধিকারীকে। বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা থেকে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছে। কোনও রাখঢাক না রেখেই তীব্র সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলেছেন শুভেন্দু। পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাতেই বিশ্বাস করেন। মুর্শিদাবাদ, মালদহের মতো মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাতেও সেভাবে সাম্প্রদায়িক হিংসা দেখা যায় না। কিন্তু গত বছর লোকসভা নির্বাচনের সময় কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদের শক্তিপুর এলাকা। এই গোলমালের জন্য কার্তিক মহারাজের দিকে আঙুল তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও কার্তিক মহারাজ এজন্যেই মানহানির আইনি চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সেটি কলকাতা হাইকোর্ট বাতিল করে দেয়।


মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা এলাকার বহু মানুষ মনে করেন, কার্তিক মহারাজ চাইলে সমাজসেবামূলক ভালো কাজ করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে এভাবে ধর্মীয় বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়াটাকে তাঁরা ভালো বলে মনে করছেন না। এই পটভূমিতে কার্তিক মহারাজের পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপ্তি নিয়ে নানা রাজনৈতিক বিতর্কের অবকাশ তৈরি হয়েছে। একই ভাবে তাঁর পদ্মশ্রী প্রাপ্তি নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ স্পষ্ট বলেছেন, বিজেপির সুপারিশেই কার্তিক মহারাজ পদ্মশ্রী পেয়েছেন। তাঁর মতে, ‘কার্তিক মহারাজ একা প্রমাণ করে দিলেন যে, পদ্মশ্রীটা বিজেপির সুপারিশ।’ তার উত্তরে কার্তিক মহারাজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র ওঁর মতো করে উনি বলবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি সন্ন্যাসী মানুষ। মানুষের সেবাই আমার বড় পুরস্কার। এই স্বীকৃতি দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।’

প্রসঙ্গত রামমন্দির আন্দোলনে যুক্ত সাধ্বী ঋতম্ভরাকে পদ্মভূষণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় সিবিআই-এর মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন সাধ্বী ঋতম্ভরা। পরে অবশ্য তিনি আদালতে ছাড় পেয়ে যান। তবে এভাবে ‘পদ্ম’ সম্মান দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিতর্ক আগে এত প্রকট ছিল না বলেই রাজনৈতিক মহলের অভিমত।