পাকিস্তানের হাতে উন্নত মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র, সতর্কবার্তা দিলেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পাকিস্তানের হাতে উন্নত মার্কিন ‘এয়ার-টু-এয়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র ‘এআইএম–১২০’ পৌঁছনোর খবর সামনে আসতেই প্রতিরক্ষা মহলে শুরু হয়েছে জোরালো আলোচনা। ভারতের দুই অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক, ক্যাপ্টেন অনিল গৌর এবং মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জি ডি বক্সি জানিয়েছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহকে শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যিক চুক্তি নয়, বরং বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত।

ক্যাপ্টেন অনিল গৌর বলেন, ‘এই এআইএম–১২০ ক্ষেপণাস্ত্র আসলে একটি বৃহত্তর প্রতিযোগিতার অংশ। মার্কিন সংস্থা এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে ন্যাটো দেশগুলির কাছে সরবরাহ করছে। যেহেতু পাকিস্তানও এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের মালিক, তাই তারাও ওই ক্ষেপণাস্ত্রের একটি অংশ পাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে পাকিস্তানের এফ–১৬ যুদ্ধবিমান এই একই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে আমাদের মিগ–২১ গুলি করে নামিয়েছিল, যা চালাচ্ছিলেন উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। পরে ভারত তার প্রমাণ হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ দেখিয়েছিল আমেরিকাকে এবং জানায়, পাকিস্তান অনুমতি ছাড়াই ওই মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করেছে।’


তবে গৌরের মতে, ‘এখন মার্কিন নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। তারা এই অস্ত্র পাকিস্তানকে সরবরাহ করছে, তবে এতে অতিরিক্ত আতঙ্কের কিছু নেই। ভারতীয় বায়ুসেনা একেবারে প্রস্তুত এবং এই ক্ষেপণাস্ত্রের মোকাবিলা করতে সক্ষম।’

একই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আরও এক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জি ডি বক্সি। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের এফ–১৬ বিমানে আগেও এই ধরনের এআইএম–১২০ সি ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। তখনই তারা আমাদের মিগ–২১ বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষে সেটি ব্যবহার করে। কিন্তু এখন ভারতের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক বিয়ন্ড ভিজুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর) ক্ষেপণাস্ত্র, যা যুদ্ধে বড় ব্যবধান তৈরি করে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের তখন বিভিআর ছিল না, তাই নিকটযুদ্ধের পুরনো কৌশলেই লড়তে হয়েছিল। এখন আমাদের কাছে আকাশ–১, আকাশ–২, এবং নতুন আকাশ–৩ রয়েছে, যার পাল্লা ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এতে ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তি আরও সুদৃঢ় হয়েছে।’

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমেরিকা এখন পাকিস্তান ও সৌদি আরব উভয়ের কাছেই এই ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করছে। পাকিস্তান ও সৌদির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় যুদ্ধাবস্থায় এই অস্ত্র সৌদি থেকে পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হতে পারে। তাই ভারতকে এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।’

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক ভারসাম্যের নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে, যেখানে ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক কৌশল আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।