কাশির সিরাপ খেয়ে পর পর ১০ শিশুর মৃত্যুতে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে মধ্যপ্রদেশে। মৃত্যু-পরবর্তী তদন্তে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। মৃত শিশুরা সকলেই একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের কাশির সিরাপ খেয়েছিল, যার মধ্যে পাওয়া গিয়েছে প্রাণঘাতী রাসায়নিক ডাই-ইথাইল গ্লাইকল (ডিইজি)। এই ঘটনায় শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক চিকিৎসককেও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত চিকিৎসকের নাম প্রবীণ সোনি। অভিযোগ, তাঁর প্রেসক্রিপশনেই শিশুরা ‘কোল্ডরিফ’ নামের ওই কাশির সিরাপ খেয়েছিল। ডিইজি-যুক্ত এই সিরাপ খাওয়ার পরেই একে একে ১০ শিশুর মৃত্যু হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। যদিও চিকিৎসক জেনে না-জেনে এই ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছিলেন, তা এখনও তদন্তসাপেক্ষ।
এই সিরাপ উৎপাদন করেছিল মধ্যপ্রদেশেরই ওষুধ সংস্থা স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যাল্স। সংস্থার বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের হয়েছে। ছিন্দওয়াড়ার পরাসিয়া কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের ব্লক মেডিক্যাল অফিসার ডা. অঙ্কিত সহলাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স অ্যাক্ট ও ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ।
সিরাপটির নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে দেখা যায়, প্রতি মিলিলিটারে রয়েছে ৪৮.৬ শতাংশ ডাই-ইথাইল গ্লাইকল (ডিইজি), যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক বিষাক্ত। এই রাসায়নিক কিডনি বিকল করে দিতে পারে এবং মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
এদিকে এই ঘটনার জেরে মধ্যপ্রদেশ সরকার ‘কোল্ডরিফ’ সিরাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। একই পথে হেঁটেছে কেরল এবং রাজস্থান সরকারও। রাজস্থানে ইতিমধ্যেই দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে নিম্নমানের কাশির সিরাপ খেয়ে। সেই রাজ্যে ‘কেসন ফার্মা’ নামক একটি ওষুধ সংস্থার তৈরি ১৯টি ওষুধের বিক্রি স্থগিত রাখা হয়েছে।
রাজস্থানের ড্রাগ কন্ট্রোলার রাজারাম শর্মাকে সাসপেন্ড করে ঘটনা তদন্তে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশও দিয়েছে রাজ্য সরকার। কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ জানান, ওই বিষাক্ত সিরাপের বিতর্কিত ব্যাচ এখনও কেরলে বিক্রি হয়নি। তবে আগাম সতর্কতা হিসাবে ‘কোল্ডরিফ’ সিরাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দেশজুড়ে শিশুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এই ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে ওষুধের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ওষুধ উৎপাদন নয়, প্রেসক্রিপশনের ক্ষেত্রেও সচেতনতা ও কঠোর নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ সরকার।