দিল্লি ভোটে আপ-কংগ্রেসের ফল নিয়ে কটাক্ষ ওমর আবুদল্লার

ফাইল চিত্র

শনিবার দিল্লির বিধানসভা ভোটের সর্বশেষ পাওয়া ফল অনুযায়ী, বিজেপি ৪৮টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে। অন্যদিকে মাত্র ২২টি আসন পেয়ে আপ একটি দুর্বল বিরোধী দলের তকমা পেতে চলেছে। বিপুলভাবে বিজেপির এই জয়ের জন্য ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের দায়ী করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরে মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) নেতা ওমর আবদুল্লা। ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের অন্যতম সদস্য এনসি-র শীর্ষ নেতা কার্যত তুলোধোনা করেছেন আপ ও কংগ্রেসকে। তিনি বলেছেন, নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের ফলেই দিল্লির নির্বাচনে এই শোচনীয় পরাজয় হয়েছে কংগ্রেস ও আপ-এর। এজন্য তিনি জোটের অন্তর্ভুক্ত দুই দলের দ্বন্দ্বের দিকে আঙুল তুলেছেন। সমাজ মাধ্যমে কটাক্ষ করে ওমর বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে আরও লড়াই করো।’

৭০ আসন বিশিষ্ট দিল্লি বিধানসভায় কংগ্রেস এবার খাতাই খুলতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যমে একটি জিফ পোস্ট করেছেন ওমর আবুদল্লা। সেই জিফে এক সাধুকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘ইচ্ছা মতো লড়াই করো। একে অপরকে শেষ করে দাও।’ সেই জিফের ক্যাপশনে ওমর লিখেছেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে আরও লড়াই করো।’’

প্রসঙ্গত লোকসভা ভোটের আগে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি মিলিতভাবে গঠন করেছিল ‘ইন্ডিয়া’ জোট। উদ্দেশ্য ছিল, কেন্দ্রের মোদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে সেই উদ্দেশ্য সফল না হলেও অনেকটাই বিপাকে ফেলতে পেরেছে। মমতার নামকরণ করা এই জোট তাদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে বিজেপিকে অনেকটা নিচে নামিয়ে আনতে পেরেছে। পাশাপাশি, গতবারের তুলনায় কংগ্রেসের আসন সংখ্যা যেমন দ্বিগুণ হয়েছে, তেমনি এরাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসও বিজেপির থেকে ৬টি আসন ছিনিয়ে নিতে পেরেছে। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনেও আপ, কংগ্রেস ও অন্যান্য শরিকদলের সঙ্গে জোট হলে ফল অন্যরকম হতে পারতো। ক্ষমতায় নাও আসতে পারতো বিজেপি। কিন্তু এবার তা হয়নি। একদিনে কংগ্রেস যেমন এককভাবে লড়াইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছে, ঠিক তেমনি আপও বিরোধীদের উপযুক্ত সংখ্যায় আসন ছেড়ে না দিয়ে এককাট্টা ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে বিরোধী ভোট ভাগ হতেই কুর্শি দখলে মোদীর বিজেপি-কে অনেকটা সুবিধা করে দিয়েছে।


দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির কাছে একপ্রকারের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। সেই লড়াইয়ে করুণ পরিণতির দিকে এগিয়ে তারা। আর ওমর আবদুল্লাহর দাবি যে মিথ্যা নয়, তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দিল্লির একাধিক মুসলিম প্রধান আসনের প্রবণতায় তার প্রতিফলনও পাওয়া গিয়েছে। বিশেষ করে ওখলার মতো আসনে কংগ্রেস, আপ ও এআইএমআইএম-এর ভোট কাটাকাটিতে এগিয়ে গিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী মণীষ চৌধুরী। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পর ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্দরে কী সমীকরণ তৈরি হয়, এখন সেটাই দেখার। এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁদের চেতনার কোনও পরিবর্তন ঘটে কিনা!

উল্লেখ্য, এবার দিল্লির বিধানসভার প্রচারে নেমে আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে লাগাতার কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেসের সাংসদ রাহুল গান্ধী ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা। ছেড়ে দেননি কেজরিওয়ালও। তিনি পাল্টা ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ মামলা নিয়ে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করেছেন। তবে ‘ইন্ডিয়া’-এর অন্যতম শরিক সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ নেতা অখিলেশ যাদব প্রকাশ্যে আপ নেতা কেজরিওয়ালের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আপ-এর হয়ে প্রচারও করেছেন অখিলেশ। অন্যদিকে জোট শরিক তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এনসিপির নেতা শরদ যাদব আপকে সমর্থন করলেও তাঁরা প্রচারের ময়দানে নামেননি। এ বিষয়ে শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান উদ্ধব ঠাকরেই একমাত্র নিরপেক্ষ ছিলেন।

কিন্তু ওমর আব্দুল্লা দিল্লি ভোটের প্রচারে আপ ও কংগ্রেসের পরস্পর কটাক্ষকে করা নিয়ে আগেই সতর্কবাণী শুনিয়েছিলেন। সেসময় তিনি বলেছিলেন, ‘আগেও বলেছি, আবার বলছি, ইন্ডিয়ার জোটশরিকদের এক সঙ্গে বসতে হবে, ভবিষ্যতের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। এ ভাবে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তা দেশের জন্য ভাল হবে না।’

ওমর তাঁর বক্তব্যে লোকসভা ভোটের কথাও স্মরণ করিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা পুরোপুরি সফল না হলেও সংসদে বিরোধী জোটকে অনেকটাই মজবুত করতে পেরেছি। এই পরিস্থিতিতে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তা ভাল হবে না।’ তবে ওমরের সাবধানবাণীতে কর্ণপাত করেনি ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম এই দুই শরিক দল। দিল্লি ভোটের প্রচারে একে অপরকে লক্ষ্য করে তোপ দেগে যান আপ ও কংগ্রেস নেতারা। সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আবারও কটাক্ষ করলেন ওমর।