হিমাচলে ২ মাসের শিশুকে বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খরস্রোতা নদী পার হলেন নার্স

ভিজে পাথরের উপর থেকে লাফ দিয়ে পার হচ্ছেন কমলা।

মাণ্ডি, ২৩ আগস্ট– দুই মাসের শিশুর প্রাণ বাঁচাতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও খরস্রোতা নদী পার হলেন এক নার্স। পাহাড়ের ঝরনার থেকে বয়ে আসা প্রবল জলস্রোতের মুখে রয়েছে বড়বড় বিষম পাথর। জলে ভেজা উঁচু পাথরের চাঁই থেকে লাফ দেওয়ার সময় সেই একটু পিছলে গেলেই আহত হয়ে নিজের ভারসাম্য হারানোর সম্ভাবনা, নিমেষে ভেসে যাবেন প্রবল জলস্রোতে। তা জেনেও প্রাণের ঝুঁকি নিলেন তিনি। হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলায় ঘটেছে এই ঘটনা। ওই নার্সের সেই দুঃসাহসিক ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলে। প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও।

জানা গিয়েছে, টিক্কর গ্রামের বাসিন্দা ওই নার্সের নাম কমলা। প্রতিদিনের মতো তিনি তাঁর ডিউটিতে যোগ দিতে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ এক জরুরি ফোনেই তাঁর গন্তব্য বদলে যায়। ফোনে তাঁকে জানানো হয়, একটি শিশু খুবই অসুস্থ আছে। এখনই তাকে ইনজেকশন দিতে হবে। মাত্র দুই মাসের ওই মুমূর্ষু শিশুকে জীবনদায়ী ইনজেকশন দেওয়া খুবই জরুরি শুনে প্রাণ হাতে খরস্রোতা নদী পার হতে এতটুকু দ্বিধা করেননি কমলা। মান্ডি জেলার চৌহরঘাটি এলাকার সুদহার পঞ্চায়েতে ঘটেছে এই ঘটনা।

তবে রোগীর কাছে পৌঁছনোর কোনও সহজ রাস্তা নেই। যাওয়ার পথে পড়ে একটি খরস্রোতা নদী। টানা বৃষ্টিতে নদীর উপরে থাকা সেতু আর ফুটব্রিজ ভেসে গিয়েছে। ফলে একমাত্র উপায় প্রচণ্ড স্রোতের মধ্যে পাথরের উপর ভর দিয়ে এগিয়ে যাওয়া। সেই কাজে যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। পা পিছলে গেলে যে কোনও মুহূর্তে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা সত্ত্বেও পিছিয়ে যাননি কমলা। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়। রাস্তাঘাট নেই, ব্রিজও সব ভেসে গিয়েছে। তবুও রোগীর জন্য পৌঁছতেই হবে।’


অবশেষে মুমূর্ষু শিশুটির কাছে পৌঁছন তিনি। ইনজেকশন দিয়ে ফের হাঁটা পথে হাসপাতালে ফিরে আসেন। তাঁর এই অসম সাহসিকতার জন্য কুর্নিশ জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষজন। পাশাপাশি তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিদিন প্রাণ হাতে নিয়ে এভাবে কেন যাতায়াত করতে হবে?

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এই এলাকায় বার বার স্রোতে ভেসে গিয়ে ঘটেছে একাধিক দুর্ঘটনা। ফলে কমলার ভিডিওতে যেমন তাঁর সাহস লক্ষ্য করা গিয়েছে, তেমনি প্রশাসনিক ব্যর্থতাও চোখে আঙুল দিয়ে সকলকে দেখিয়ে দিয়েছে।