লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা, ষষ্ঠ তফসিল অন্তর্ভুক্তি এবং পরিবেশ সুরক্ষার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার বিজ্ঞানী ও জলবায়ু আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুক। এবার তাঁর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অলটারনেটিভ লার্নিং-এর বরাদ্দ জমি আচমকাই বাতিল করল লাদাখ প্রশাসন। প্রশাসনিক এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে লাদাখবাসী। তাঁদের অভিযোগ, সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার ‘শাস্তি’ দিতেই এই সিদ্ধান্ত।
২০১৮ সালে সোনম ওয়াংচুকের আবেদন অনুযায়ী এবং যাবতীয় সরকারি প্রক্রিয়া মেনেই হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অলটারনেটিভ লার্নিং-এর জন্য ৪০ বছরের জন্য ৫৪ হেক্টর জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি, লেহ জেলার ডেপুটি কমিশনার সেই বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশ জারি করেন। প্রশাসনের যুক্তি, হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অলটারনেটিভ লার্নিং জমি বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী এখনও কোনও স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সেই কারণে ওই বরাদ্দ রদ করা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে জমির সব সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সোনম ওয়াংচুক বলেন, ‘এটা শুধু আমার প্রতিষ্ঠান নয়, পুরো লাদাখবাসীর স্বপ্নের উপর আঘাত। এটা আসলে লাদাখের রাজনৈতিক সংগঠন লেহ অ্যাপেক্স বডি এবং কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স-এর উপরও এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা।’ তিনি এই সিদ্ধান্তকে গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার ষড়যন্ত্র বলেও আখ্যা দিয়েছেন। লাদাখের নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। লেহ অ্যাপেক্স বডির তরফে বলা হয়েছে, ‘এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, গোটা জনগণকে ভয় দেখানোর চেষ্টা। লাদাখের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার অপচেষ্টা।’
প্রসঙ্গত, গত বছর অক্টোবরে লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনা ও স্থানীয় অধিকার সংরক্ষণের দাবিতে দিল্লির লাদাখ ভবনের সামনে অনশন শুরু করেছিলেন সোনম ওয়াংচুক এবং তাঁর সহযোগীরা। টানা অনশনের ষোড়শ দিনে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জয়েন্ট সেক্রেটারি প্রশান্ত লোখাণ্ডে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে তখন অনশন ভেঙেছিলেন সোনম। তবে আন্দোলনের বার্তা স্পষ্ট ছিল – লাদাখের মানুষ তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে সরে আসবেন না।
সোনম ওয়াংচুকের প্রতিষ্ঠানের জমি বাতিলের এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে লাদাখের জনজীবন। রাজনৈতিক ও নাগরিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে? প্রশাসনিক কৌশলে কি কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে? এই ঘটনার পর নতুন করে কেন্দ্র-লাদাখ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছে গোটা দেশ।