মহারাষ্ট্রে জোট সরকারের কোনও সঙ্কট নেই : শরদ পাওয়ার

শরদ পাওয়ার ও উদ্ধব ঠাকরে। (File Photo: IANS)

করোনা মোকাবিলায় লকডাউন যে কোনও ব্যবস্থা নয় তার প্রমাণ দিন দিন বেড়ে চলা সংক্রমণ সংখ্যা। এরই মধ্যে বিজেপি মহারাষ্ট্রে সরকার ভাঙার কাজে কলকাঠি নাড়তে শুরু করেছে বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের অসুবিধা দূর করতে যে ব্যর্থ হয়েছে তা নীতি আয়োগের প্রধান নির্বাহীই জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপির কেবল জোট সরকার ভেঙে দিয়ে তা বিজেপি’র দখলে আনাই একমাত্র মিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শরদ পাওয়ার । এর মধ্যেই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন, করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতার কথা।

এরপরই বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মহারাষ্ট্রের সেনা-এনসিপি কংগ্রেস জোট সরকারের শরিকদের বিশেষত কংগ্রেস সদস্যদের প্রলোভন দেখান নাকি শুরু করে দিয়েছেন। ঠিক যে কায়দায় মধ্যপ্রদেশে কমলনাথ সরকারকে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।


মহারাষ্ট্র জোট সরকারের মূল স্থপতি শরদ পাওয়ার জানিয়েছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অযথা অস্থির হয়ে পড়ছেন, কিন্তু সাফ জানিয়ে দেওয়া ভাল সেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট সরকার অটুট রয়েছে এবং থাকবে।

অন্যদিকে মহারাষ্ট্র তথা মুম্বই শহরেই দেশের মধ্যে করোনা সংক্রমণ সর্বাধিক। প্রাক্তন সেনা ও বর্তমান বিজেপি নেতা নারায়ণ রাণা উদ্ভব ঠাকরের সমালোচনা করে জানিয়েছেন, করোনা মোকাবিলায় উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে মহারাষ্ট্র সরকার একেবারেই ব্যর্থ। অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে সরিয়ে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত।

করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বৈঠক করেন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার । যদিও এদিন অন্যতম জোট শরিক কংগ্রেসের পক্ষে কেউ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু বৈঠক শেষে শরদ পাওয়ার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জোট সরকারের শরিকরা একজোট হয়েই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছেন।

গত অক্টোবর মাসে মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচনের পর কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কিন্তু সেনা-বিজেপি জোট সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। পরবর্তীতে সেনা-বিজেপির মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের ফলে ত্রিশ বছরের জোটে ভাঙন ধরে।

এনসিপি নেতা শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরেকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাব করে কংগ্রেসকে জোট সরকারে শামিল করেন। এরই মধ্যে শরদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার পূর্ব মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফরনবিশের সঙ্গে জোট করে ভোররাতে শপথ নিয়ে নেন। রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারির এমন ন্যক্কারজনক পক্ষপাতমূলক কাজের জন্য সারা দেশে ছি ছি পড়ে যায়।

কিন্তু ৭২ ঘন্টাও কাটেনি দেবেন্দ্রর সরকারের। শরদ পাওয়ার তাঁর ভাইপোকে কংগ্রেস-সেনা-এনসিপি জোটে শামিল করে সরকার গঠনে সফল হন। উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রে নতুন জোটের সরকার গঠিত হয়। গতকাল শরদ পাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করেন। এব্যাপারে শরদ পাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন।

অন্যদিকে রাহুল গান্ধি বলেছেন, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে নেই। এতে জোট সরকার নিয়ে খানিকটা সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মহারাষ্ট্রে শরিকী মতানৈক্য নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি রাহুল। শিবসেনা ও শরদ পাওয়ারের এনসিপি সাফ জানিয়েছে জোট সরকারে কোনও সংকট নেই। এনসিপির পক্ষে মাজিদ মেমন জানিয়েছেন কংগ্রেস তো ক্যাবিনেটের অংশ।

রাহুল গান্ধি সাংবাদিকদের জানান, কংগ্রেস মহারাষ্ট্রের সরকারকে সমর্থন করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনও ক্ষমতা নেই। কংগ্রেস কেবল পাঞ্জাব, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও পুদুচেরিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারার অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। রাহুল জানান, সরকারকে সমর্থন জানানো এক আর সরকার চালানো আর এক।

তিনি বলেন, মহারাষ্ট্র তথা মুম্বই দেশের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। কেন্দ্রের উচিত মহারাষ্ট্রের সমস্যা সমাধানে আরও সচেতনভাবে উদ্যোগী হওয়া।

অন্যদিকে এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে জানিয়েছেন, রাহুল গান্ধি’র বক্তব্য তিনি শুনেছেন, তিনি সঠিকভাবেই মন্তব্য করেছেন। কারণ জোট সরকারে শরিকদের সকলের মতামতই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে শরিকদের মতামত নিয়েই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে থাকেন। তিনি জানান, কংগ্রেস বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন জানাচ্ছে না, কংগ্রেস ক্যাবিনেটের অংশ। সিদ্ধান্তে তাদের সই রয়েছে।