‘টাইগার আভি জিন্দা হ্যায়’– নীতীশ কুমার এবং বাঘের মুখ সম্বলিত ছবি দিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ লাইনটি লেখা ছিল পাটনায় জেডিইউ দপ্তরের বাইরে। এই কথাটি যে কতটা বাস্তব সম্মত, শুক্রবার যত বেলা গড়িয়েছে, ততই তা স্পষ্ট হয়েছে। ভোটের আগে নীতীশের অসুস্থতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা খবর ছড়িয়েছিল। বার্ধক্যজনিত কারণে নীতীশ আর সক্রিয় রাজনীতিতে থাকবেন কি না, তা নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছিল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। এই প্রশ্ন শুধু যে প্রধান বিরোধী দল আরজেডি বা কংগ্রেসই তুলেছিল, তা নয়। এনডিএ-র অন্দরেও বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়।
তবে নীতীশ অবশ্য গত কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচনের মতো এ বারও ভোটারদের সামনে নিজের ‘সুশাসনবাবু’ ভাবমূর্তি তুলে ধরেছিলেন। জনসভা এবং প্রচার কার্যে অংশ নিয়ে তিনি নিজে শারীরিকভাবে এখনও যে যথেষ্ট সক্রিয় তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। নীতীশ কুমার বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলেন, যা বিরোধী দলের প্রচারকে মোকাবিলা করার প্রচেষ্টা হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে এনডিএ জোট এক বিস্ময়কর জয় পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা এবং রাজ্যের মহিলা-ভিত্তিক কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির সাফল্য জোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে এনডিএ অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকা দখল করেছে।
ভোটের গণনার শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এনডিএ ২০২টি আসন পেয়েছে। জোটে থাকা প্রধান শরিক দল বিজেপি ও জেডিইউ ছাড়াও চিরাগ পাসোওয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি, হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (সেকুলার) বহু আসন বিরোধীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্ট হয়েছে, এনডিএ জোটই ফের বিহারের ক্ষমতায়।
তবে নির্বাচনের ফলাফলের পরই মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। সেই আলোচনায় সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে, নীতীশ কুমার ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন কি না তা নিয়ে। নির্বাচনের পর জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে একটি পোস্টে দাবি করা হয়, ‘বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নীতীশ ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন’। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে সেই পোস্ট ডিলিট করা হয়, এই ঘটনা সেই জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপি, লোক জনশক্তি পার্টি এবং হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার অবস্থান এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। এনডিএ জোটে বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে, যা জোটের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিশেষত, জোটের এই ফলাফলের নিরিখে কে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে এনডিএ-র জয় কেবল ভোটের সংখ্যার প্রমাণ নয়, বরং বাস্তবায়িত সরকারি প্রকল্প ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সরাসরি প্রতিফলন।