বিহার ভোটে এনডিএ জোটের প্রধান মুখ নীতীশ, ঘোষণা মোদীর

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসাবে ইন্ডিয়া জোটের ঘোষণার একদিনের মধ্যেই এনডিএ জোটের প্রধান মুখ হিসেবে নীতীশ কুমারের নাম ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে নীতীশের নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করলেও তিনিই যে মুখ্যমন্ত্রী হবেন তেমন কোনও আশ্বাস দেননি মোদী। তিনি বলেছেন, নীতীশ কুমারের নেতৃত্বেই সব রেকর্ড ভেঙে বিহারের বিধানসভা ভোটে জিতবে এনডিএ। বিহারের সমস্তিপুরে বিধানসভা ভোটের প্রচারে শুক্রবার কংগ্রেস-আরজেডি-কে তীব্র নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী।  

বিরোধী মহাজোটের তরফে এনডিএ-কে চ্যালেঞ্জ করে বলা হয়, “আমাদের মুখ তো তেজস্বী, আপনাদের কে?  এরপরেই বিহারের সমস্তিপুরের দুধপুরার জনসভা থেকে মোদী বলেন, নীতীশ কুমারের নেতৃত্বেই এনডিএ বিহারে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। যদিও ভোটের পরও নীতীশ মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কিনা, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। প্রয়াত কেন্দ্রীয়মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগকে পাশে বসিয়ে এনডিএ জোটের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে বিহারে আবার এনডিএ-র সাফল্যের আশ্বাস দেন মোদী। মোদীর মঞ্চে এদিন ছিলেন নীতীশ কুমার, চিরাগ পাসোয়ান ছাড়াও উপেন্দ্র কুশওয়া।
 
তিনি বলেন, ‘আপনারা মোবাইলে টর্চের আলো অন করে দিন। এই আলো উন্নতির বার্তা দেয়। আরজেডি-র নির্বাচনী প্রতীক লণ্ঠনকে নিশানা করে তিনি বলেন. এরপর আপনারা কি লণ্ঠনের আলো চাইবেন? গোটা দেশের মানুষ আর লণ্ঠনের আলো চায় না।’ আরজেডিকে কটাক্ষ করে তাঁর কটাক্ষ, ‘ আরজেডি-র মতো দল থাকলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা থাকে না। আপনারা কি আবার পুরনো দিন ফিরিয়ে আনতে চান?’  তাঁর দাবি, দুই ভাই- মোদী ও নীতীশ মিলে বিহারের সব সমস্যার সমাধান করে চলেছে । 
এদিন মোদীর ভাষণে কংগ্রেস এবং আরজেডি-র প্রতি আক্রমণ ছিল তীব্র। তিনি বলেন, আরজেডি এবং কংগ্রেস মুখে যা বলে, আর কাজে যা করে তার মধ্যে কতটা মিল তা আপনারা আমার থেকে ভাল করে জানেন। মহাজোটের নেতাদের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি রয়েছে, কিন্তু তারা গারদের বাইরে ঘুরছে। চুরি করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।  
 
বৃহস্পতিবার বিরোধী জোটের তরফে তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এরপরই কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলট কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে প্রশ্ন তোলেন, বিজেপি জোটের মুখ্যমন্ত্রী কে। বিহারে এই মুহূর্তে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে সরকার চালাচ্ছে এনডিএ। বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে জেডিইউ-এর থেকে বিজেপি অনেক শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও জোটের স্বার্থে নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী রাখা হয়েছে।
তবে বিহার বিজেপির দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, আসন্ন নির্বাচনে আর নীতীশকে মুখ না করে বিজেপির কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। অথবা আগেই ঘোষণা না করে ভোটের পর আসনের ভিত্তিতে ঠিক করা হোক কে মুখ্যমন্ত্রী হবে। কিন্তু লোকসভায় বিজেপির খারাপ ফল হওয়ায় গেরুয়া শিবির এখন নীতীশ নির্ভর। সম্ভবত সেই কারণেই ভোটের আগে নীতীশকে চটাতে চান না প্রধানমন্ত্রী।
 
নীতীশের উপর আস্থা রাখার আরেকটি কারণ হল, তেজস্বী যাদব এবার বিহারের যাদব-মুসলিমদের পাশাপাশি নীতীশের ইবিসি (এক্সট্রিমলি ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস) ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে চাইছেন। সেই লক্ষ্যে মাঝির ছেলে মুখেশ সাহানিকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয়েছে। তেজস্বী অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন, নীতীশকে আর মুখ্যমন্ত্রী করবে না বিজেপি।
তাঁর দলও ভোটের পর গুরুত্বহীন হয়ে যাবে। এতে এই ইবিসি ভোটারদের একাংশ এনডিএ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সেই কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রকাশ্যে নীতীশকে এনডিএ-র নেতা হিসাবে ঘোষণা করেছেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের অনুমান।