নবমবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন নীতীশ কুমার

পাটনা: টানা নয়বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে রেকর্ড গড়লেন জেডিইউ-এর সর্ব ভারতীয় সভাপতি নীতিশ কুমার। আজ রবিবার পাটনার রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নীতীশ কুমার শপথ নিয়েছেন। তিনি ছাড়াও শপথ নিয়েছেন দুইজন উপ মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি বিধায়ক এই দুই উপ মুখ্যমন্ত্রী হলেন সম্রাট চৌধুরী ও বিজয় সিনহা।

উল্লেখ্য, কয়েকদিন ধরেই পাটনার রাজপথে কানাঘুষো শুরু হয়েছিল। নীতীশ কুমার আরজেডি ও জেডিইউ-এর নেতৃত্বাধীন ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার ভেঙ্গে দিয়ে ফের এনডিএ শিবিরে যোগদান করতে চলেছেন। জেডিইউ ও বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন সেই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হবেন নীতীশ কুমার। এবং সম্ভাব্য উপমুখ্যমন্ত্রী তাঁর ঘনিষ্ঠ সুশীল মোদি। গতকাল অবধি এটুকুই ঠিকঠাক ছিল। যদিও আজ সকালে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে জোট শরিকদের ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার ভেঙে দেওয়ার পর চিত্র কিছুটা বদলে যায়। একদিকে জেডিইউ দলীয় স্তরে একটি বৈঠক ডাকে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করবে জেডিইউ। অন্যদিকে রাজ্যের বিজেপি বিধায়করাও আলোচনায় বসেন। সেখানে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, জেডিইউ-কে সমর্থন করবে বিজেপি। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করা হবে। উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন বিজেপি বিধায়ক সম্রাট চৌধুরী ও বিজয় সিনহা। এজন্য সম্রাট চৌধুরীকে রাজ্যের বিজেপি বিধায়কদের দলনেতা নির্বাচন করা হয়। রাজভবনেও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নীতীশ কুমারকে সমর্থন জানিয়ে প্রস্তাবপত্র পেশ করে এনডিএ জোট। একইভাবে জেডিইউ-এর তরফ থেকে নীতীশ কুমারও রাজভবনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিয়ে সরকার গঠনের আবেদন করেন। রাজ্যপাল সেই সম্মতি দেওয়ার পর বিকেল পাঁচটা নাগাদ শুরু হয় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নীতীশ কুমার এবং বিজেপি-র দুই উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী ও বিজয় সিনহা।

এদিকে আজ পদত্যাগের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নীতীশ কুমার বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে সরকার ভেঙে দিলাম। এই বিষয়ে আমি সবদিক থেকে মতামত নিয়েছি। এর আগে এনডিএ ছেড়ে নতুন জোট তৈরি করেছিলাম। কিন্তু ওই জোটে সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল না। তাই আমি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এরপর জেডিইউ ও অন্য দলের বিধায়করা পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ নীতীশ কুমার এতদিন পর আজ ইন্ডিয়া জোট নিয়েও সরব হন। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম সবাইকে এক ছাতার তলায় আনতে। কিন্তু ওই জোটে কেউ কারও কথা শুনছে না।’


প্রসঙ্গত নীতীশ কুমার ঘন ঘন রাজনৈতিক ইউ-টার্নের জন্য পরিচিত। এর আগে দুইবার এনডিএ ত্যাগ করেছিলেন এবং ২০২২ সালে সরকার গঠনের জন্য RJD-এর নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধনে (মহাজোট) যোগ দিয়েছিলেন। গত দশ বছরে নীতিশ কুমার এই নিয়ে চতুর্থ বার জোট বদল করলেন। এর আগে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি মোদিকে ‘প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ ঘোষণা করার পরে প্রতিবাদ জানিয়ে এনডিএ জোট ছেড়েছিলেন নীতীশ। কিন্তু সেই লোকসভা ভোটে একা লড়ে হার হয় জেডিইউ-র। এরপর ২০১৫-র বিধানসভা ভোটে আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে মহাজোট গড়ে জয়ী হন তিনি। কিন্তু লালুপ্রসাদ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফের ২০১৭-য় বিজেপির সঙ্গে হাত মেলান।
২০২০-র বিধানসভা ভোটে তুলনায় কম আসন পেয়েও নীতীশ ফের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া অবধি বিজেপি-জেডিইউ জোটে সমস্যা বাড়ছিল। কখনও জাতপাত-ভিত্তিক জনগণনা, কখনও সিএএ, কখনও ‘বিহারের সন্ত্রাসের রমরমা’ নিয়ে প্রকাশ্য সমালোচনায় মেতেছেন দু’দলের নেতারা। ২০২০ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে লড়ে জিতলেও ২০২২ সালের আগস্টে এনডিএ ছেড়ে বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের সমর্থন নিয়ে ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার গড়েছিলেন নীতীশ। এবার ২০২৪-এর ২৮ জানুয়ারি ফের শিবির বদল করলেন জেডিইউ প্রধান।