সীমান্তে দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং কৌশলগত অভিযানের জন্য নতুন অস্ত্র হাতে পাচ্ছে ভারতীয় সেনা। গঠন করা হচ্ছে বিশেষ কমান্ডো ইউনিট ‘ভৈরব’ বাহিনী, যা একসঙ্গে সামলাবে সীমান্ত সুরক্ষা, সন্ত্রাস দমন এবং জরুরি সামরিক অভিযান। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি ব্যাটালিয়ন গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রতিটি ব্যাটালিয়নে থাকবেন ২৫০ জন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জওয়ান, যাঁদের বেছে নেওয়া হয়েছে পদাতিক বাহিনী ও প্যারা স্পেশাল ফোর্স থেকে।
সেনার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এই পাঁচটি ব্যাটালিয়ন সম্পূর্ণ প্রস্তুত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সীমান্তে পাকিস্তান ও চিনের ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপ এবং সাম্প্রতিক সংঘাত পরিস্থিতি মাথায় রেখেই এই বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেনা সূত্রের দাবি, সীমান্তে যে কোনও আকস্মিক পরিস্থিতিতে দ্রুত পাল্টা জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে এই বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
প্রথম পর্যায়ের পাঁচটি ব্যাটালিয়নের মধ্যে তিনটি রাখা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের নর্দার্ন কমান্ডের অধীনে। শ্রীনগরের ১৫ নম্বর কর্পস, জম্মুর নাগরোটার ১৬ নম্বর কর্পস এবং লেহ অঞ্চলের ১৪ নম্বর কর্পসের জন্য আলাদা ইউনিট থাকবে। বাকি দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি পশ্চিম ভারতের মরু এলাকায় এবং অপরটি পূর্বাঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মোতায়েন করা হবে।
এই বিশেষ বাহিনীকে সজ্জিত করা হচ্ছে আধুনিক সমরাস্ত্র, উন্নত প্রযুক্তি, অত্যাধুনিক ড্রোন এবং রিয়েল-টাইম তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবস্থার সঙ্গে। সেনার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘ভৈরব বাহিনী সীমান্তে শুধু নজরদারিই করবে না, প্রয়োজন হলে সরাসরি আক্রমণেও যাবে। যেকোনও অভিযানের জন্য দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে এটি হবে অন্যতম ভরসা।’
বর্তমানে ভারতীয় সেনায় রয়েছে ১০টি প্যারা স্পেশাল ফোর্স এবং পাঁচটি প্যারা ব্যাটালিয়ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ভৈরব’ বাহিনী যুক্ত হলে সেনার প্রতিক্রিয়াশীল ক্ষমতা আরও বাড়বে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অরুণাভ মুখার্জির মতে, ‘শুধু সীমান্ত নয়, সন্ত্রাস দমনেও এই বাহিনী ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। দ্রুত এবং কার্যকর অভিযানের জন্য এমন একটি ইউনিট ছিল সময়ের দাবি।’
সম্প্রতি সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহানও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, ভারত শান্তিপ্রিয় হলেও দুর্বল নয়। তাঁর মতে, শক্তি ছাড়া শান্তি শুধুই এক কল্পনা, তাই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকাই শান্তির মূল ভিত্তি। সেনার শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য, এই ধারণাকেই সামনে রেখে আধুনিকায়ন এবং শক্তি বৃদ্ধির পথেই এগোচ্ছে সেনা।
প্রতিরক্ষা দপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ধাপে ধাপে ২৩টি ব্যাটালিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত করা হবে ‘ভৈরব’ বাহিনীকে। ফলে সীমান্ত সুরক্ষা থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা—প্রতিটি ক্ষেত্রে সেনার ক্ষমতা আরও বহুগুণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।