আরারিয়া, কাটিহার, কিষানগঞ্জ, পুর্ণিয়া— বাংলা লাগোয়া বিহারের এই চার জেলা একসঙ্গে সীমাঞ্চল নামে পরিচিত। এই অঞ্চলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। বিহারে মহাজোটের বড় ভরসার এলাকা ছিল এই সীমাঞ্চল। কিন্তু ভোট গণনার পর দেখা গেছে, সীমাঞ্চল থেকে ধুয়েমুছে সাফ মহাজোট।
২০২০ সালের নির্বাচনে ওয়েইসির দল পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছিল এবং কয়েকটি আসনে দ্বিতীয় হয়। সেই সময় মহাজোট ও ওয়েইসির দলের ভোট কাটাকাটিতে এনডিএ বারোটি আসন জিতেছিল। এবারও পরিস্থিতি বদলায়নি। এই নির্বাচনে মহাজোট মাত্র একটি আসনে এগিয়ে আছে। কিষানগঞ্জ কেন্দ্রের আসনে কংগ্রেস প্রার্থী সামান্য এগিয়ে। পাঁচটি আসনে ওয়েইসির দল এগিয়ে। বাকি সব আসনে জয়ী এনডিএ।
ভোটর একত্রিকরণ এবং প্রচার ব্যর্থ
মহাজোটের আশা ছিল, এসআইআর-এর পরে মুসলিম ভোট একত্রিত হবে। কিন্তু তা হয়নি। এসআইআর-এর পর এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি ভোটারের নাম বাদ গেছে। ফলে মহাজোটের ভোট কমেছে। সংখ্যালঘু ভোটাররা এবার ওয়েইসির দলকে সমর্থন দিয়েছে। পাঁচটি আসনে ওয়েইসির দল এগিয়ে থাকা এবং একাধিক আসনে দ্বিতীয় হওয়া এটিকে প্রমাণ করে।
উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা ব্যর্থ
মহাজোট নাসাদ ও মাল্লা ভোটের আশায় উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মুকেশ সাহানিকে ঘোষণা করে, যা ব্যর্থ হয়েছে। মুসলিম ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ওয়েইসির নেতা এই ক্ষোভের সুবিধা নিয়েছেন। ভোট কাটাকাটির সুবিধা পেয়েছে এনডিএ।
মুসলিম মহিলাদের ভোটে প্রভাব
তিন তালাক প্রথা বাতিলের পর মুসলিম মহিলাদের ভোট একটি অংশ এনডিএর দিকে গেছে। নীতীশ কুমার মহিলাদের জন্য দশ হাজার টাকা ঘোষণা করার পর মুসলিম মহিলাদের ভোটও এনডিএর পক্ষে গেছে।
মহাজোটের ব্যর্থতা এবং এনডিএর জয়
নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এনডিএ জোট রেকর্ড আসন পেয়ে জয়ের দোরগোড়ায়। বিজেপি বিহারে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হতে চলেছে, জেডিইউ-এর ওপর জয় ধরে। মহাজোট ও কংগ্রেসের পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি।
বিজেপি বর্তমানে পঁয়ান্নটি আসনে এগিয়ে, জেডিইউ পঁচাশি আসনে। জোট শরিকদেরও ভালো ফলাফল হয়েছে। চিরাগ পাসওয়ানের দল দুইএকটি আসনের মধ্যে এইটিতে এগিয়ে। উপেন্দ্র কুশওয়াহার ছয়টির মধ্যে তিনটিতে এগিয়ে। জিতন রাম মাঝির ছয়টির মধ্যে পাঁচটিতে এগিয়ে।
সীমাঞ্চল এলাকা মহাজোটের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার রূপ নিল, যেখানে ওয়েইসির দল ও এনডিএ নিজেদের প্রভাব শক্তিশালী করতে পেরেছে।