২০২৩ সালে বাংলায় একটিও কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনায় শীর্ষে রয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্য মহারাষ্ট্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে এক বছরে ১০ হাজারেরও বেশি কৃষক ও কৃষিশ্রমিক আত্মহত্যা করেছে।
যা দেশের আত্মহত্যার নিরিখে ৬ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশ। ২০২৩ সালের অপরাধমূলক বার্ষিক পরিসংখ্যান সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো অর্থাৎ এনসিআরবি। সেই রিপোর্টেই এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
এনসিআরবির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত মোট ১০ হাজার ৭৮৬ জন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। যার মধ্যে ৪ হাজার ৬৯০ জন কৃষক এবং ৬ হাজার ৯৬ জন কৃষিশ্রমিক। দেশের মোট আত্মহত্যার সংখ্যার প্রায় ৬.৩ শতাংশ। এই ৪ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে পুরুষ কৃষকের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৫৩ জন আর মহিলার সংখ্যা ১৩৭ জন।
আর নিহত ৬ হাজার ৯৬ জন কৃষিশ্রমিকের মধ্যে ৫ হাজার ৪৩৩ জন পুরুষ এবং ৬৬৩ জন মহিলা আত্মহত্যা করেছেন। তবে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা প্রায় ৪ শতাংশ কমেছে। ২০২২ সালে দেশের বিভিন্ন রাজ্য মিলিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন মোট ১১ হাজার ২৯০ জন কৃষক। সেই তুলনায় ২০২৩ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
মহারাষ্ট্রে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে ৪ হাজার ১৫১ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। যা কৃষিক্ষেত্রে মোট আত্মহত্যার ৩৮ শতাংশেরও বেশি। এরপরে রয়েছে কর্ণাটকের স্থান। ২ হাজার ৪২৩ জন কৃষক সেখানে আত্মহত্যা করেছেন। তৃতীয় স্থানে আছে অন্ধ্রপ্রদেশ। এক বছরে সেখানে অন্তত ৯২৫ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।
চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মধ্যপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ু। সেখানে এক বছরে ৭৭৭ এবং ৬৩১ জন কৃষক মারা গেছেন। মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে কৃষিশ্রমিকদের তুলনায় কৃষকদের আত্মহত্যার হার বেশি। অপরদিকে অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে আত্মহত্যায় এগিয়ে রয়েছেন কৃষিশ্রমিকরা।
এনসিআরবি কৃষিক্ষেত্রে আত্মহত্যাকে দু’টি ভাগে ভাগ করেছে। কৃষক আত্মহত্যা এবং কৃষিশ্রমিক আত্মহত্যা। এই দুই মিলিয়েই ২০২৩ সালের তালিকায় শীর্ষ দু’টি স্থান দখল করেছে মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটক। উল্লেখ্য, ২০২২ সালেও আত্মহত্যার নিরিখে এই দুই রাজ্যই এগিয়ে ছিল। ফলে এই পরিসংখ্যান বেশ উদ্বেগজনক বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
কৃষকদের দুর্দশার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন। অন্যতম কারণ হিসেবে তুলো কিংবা আখের মতো অর্থকারী ফসলের উপর কৃষকদের নির্ভরশীলতাকে দায়ী করা হয়েছে। এই ধরনের ফসল চাষের জন্য প্রথমেই মোটা অঙ্কের টাকার প্রয়োজন হয়। এই টাকা জোগাড় করতে মহাজনদের দ্বারস্থ হতে হয় কৃষকদের। ঋণ এবং চড়া সুদের বোঝা কৃষকদের বয়ে বেড়াতে হয়।
এরপর ফলন আশানুরূপ না হলে প্রায়শই চরম পদক্ষেপ করতে বাধ্য হন কৃষকরা। পিএম কিসান প্রকল্প এবং সাশ্রয়ী মূল্যের শষ্য বীমায় কৃষকরা কিছুটা সাহায্য পেলেও সামগ্রিক চিত্রটা যে বিশেষ বদলায়নি, তা এই রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট। মহাজনদের থেকে চড়া সুদে ঋণ নেওয়া ছাড়াও উচ্চ উৎপাদন ব্যয় কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় কৃষকদের।
তবে এর মধ্যে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে এনসিআরবি। কিছু কিছু রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা একটাও ঘটেনি। এনসিআরবি-র রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, চণ্ডীগড়, দিল্লি এবং লাক্ষাদ্বীপে একটিও কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা নেই।