বন্দে মাতরমের স্তবক ছেঁটে ফেলায় দেশভাগ হয়েছে, কংগ্রেসকে নিশানা মোদীর

সারা দেশজুড়ে চলছে বন্দে মাতরমের দেড়শো বছর উদযাপন। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশেষ স্ট্যাম্প এবং কয়েনও প্রকাশ করেন।  ’বন্দে মাতরম’ বিশেষ পোর্টালেরও সূচনা করেন মোদী। এদিন বন্দে মাতরমের সার্ধশতবর্ষ অনুষ্ঠান থেকে কংগ্রেসকে নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী। সাম্প্রদায়িকে শক্তিগুলিকে খুশি করতে বন্দে মাতরম গানের কিছু অংশ কংগ্রেস ছেঁটে ফেলেছে বলে দাবি করেছিলেন বিজেপি মুখপাত্র সি আর কেশবন। এবার এ নিয়ে মুখ খুললেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, বন্দে মাতরমে কাঁচি চালানোর জন্যই দেশভাগ হয়েছে।

শুক্রবার বন্দে মাতরমের ১৫০ বছর পূর্তিতে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মোদী বলেন, ‘১৯৩৭ সালে বন্দে মাতরমের বেশ কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়। বন্দে মাতরমের গুরুত্ব লঘু হয়ে যায়। গানের পংক্তি ছেঁটে ফেলার মধ্যেই লুকিয়েছিল দেশভাগের বীজ।‘ দেশবাসীকে সতর্কবার্তা দিয়ে মোদী বলেন, ‘এরকম বিভাজনমূলক মানসিকতা এখনও রয়ে গিয়েছে। সেটা আমাদের দেশের পক্ষে বিপজ্জনক।‘  কংগ্রেসের নাম না নিয়েও হাত শিবিরকেই প্রধানমন্ত্রী নিশানা করেছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের।

বিজেপি মুখপাত্র কেশবন দাবি করেন, ১৯৩৭ সালে কংগ্রেসের সম্মেলনে বন্দে মাতরম পার্টির সঙ্গীত হিসাবে গৃহীত হয়। গানের বেশ কিছু অংশ বাদ দিয়ে দেয় কংগ্রেস। জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, বন্দে মাতরমের পুরো গানে অসন্তুষ্ট হতে পারে মুসলিমরা, পুরনো চিঠির ছবি তুলে ধরে দাবি করেন কেশবন। নেহরুর হিন্দুবিরোধী মানসিকতা বহন করছে রাহুল গান্ধী মত কেশবনের।


শুক্রবার বন্দে মাতরমের ১৫০ বছর পূর্তিতে স্মারক স্ট্যাম্প এবং কয়েন প্রকাশ করেছেন মোদী। এক বছর ধরে সার্ধশতবর্ষ পালন করা হবে বলেও জানান তিনি। দেশবাসীর উদ্দেশে মোদীর বার্তা, বন্দে মাতরমের প্রতিটি শব্দ ভারতকে বিশ্বাস যোগায়। ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বন্দে মাতরম গানও করেন প্রধানমন্ত্রী।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত অনুসারে বন্দে মাতরমের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে দেশজুড়ে উদ্‌যাপন অনুষ্ঠান হবে। সার্ধশতবর্ষ অনুষ্ঠানে কংগ্রেসকে নিশানা করে মোদী বলেন, ‘কিন্তু দুর্ভাগ্য হল, ১৯৩৭ সালে বন্দে মাতরমের গুরুত্বপূর্ণ স্তবক, যা গানটির প্রাণ, সেগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বন্দে মাতরমের ওই বিভাজন দেশভাগের বীজ বপন করেছিল।’ তাঁর বক্তব্য, ‘আজকের প্রজন্মের জানা উচিত, জাতি গঠনের এই ‘মহামন্ত্র’-এর সঙ্গে কেন এই অবিচার করা হয়েছিল? এই বিভাজনমূলক মানসিকতা এখনও দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ।’

বন্দে মাতরম গানটি প্রত্যেক যুগে দেশের জন্য প্রাসঙ্গিক বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। অন্য দিকে, বন্দে মাতরমের সার্ধশতবর্ষে আরএসএস এবং বিজেপিকে এক পঙ্‌ক্তিতে ফেলে আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ  ‘যারা সংবিধানকে আক্রমণ করে, বাপু মহাত্মা গান্ধী এবং বাবাসাহেব আম্বেদকরের কুশপুতুল পোড়ায় এবং সর্দার পাটেলের মতে গান্ধীজির হত্যায় জড়িত, তারাই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়েছিল।’ খড়্গের কথায়, ‘১৯৮৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত, কংগ্রেসের ছোট-বড় প্রত্যেকটি বৈঠকে আমরা গর্বের সঙ্গে বন্দে মাতরম গাই। এই গান আমাদের দেশমাতৃকার গান। মানুষের মধ্যে একতা এবং প্রত্যেক ভারতবাসীর প্রাণের গান বন্দে মাতরম।’

বন্দে মাতরম নিয়ে কেন্দ্র তথা বিজেপির এই অতিসক্রিয়তাকে অন্যভাবে দেখছে রাজনৈতিক মহল। বছর ঘুরলেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। বাংলার ভোটযুদ্ধে এবার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে হাতিয়ার করতে চলেছে বিজেপি, মত বিশ্লেষকদের একাংশের। সূত্রের খবর, বন্দে মাতরমের পাশাপাশি বিরসা মুন্ডার জন্মেরও ১৫০ বছর পালন করবে বিজেপি। বাংলার মনীষীদের হাতিয়ার করে ভোটে জিততে চাইছে গেরুয়া শিবির। তাই কংগ্রেসকে নিশানা করার পাশাপাশি বাঙালি ভাবাবেগেও সুরসুরি দিতে চাইছে পদ্ম শিবির।