আত্মসমর্পণের সময় চেয়ে তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি মাওবাদী নেতৃত্বের

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিল মাওবাদী সংগঠন। আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে আপাতত অভিযান বন্ধ রাখার আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে মাওবাদী নেতৃত্ব। চিঠিতে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাওবাদীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান বন্ধ রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশ, এই তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এই চিঠি পেয়েছেন বলে সূত্রের খবর।

তিন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, বিষ্ণুদেও সাই ও মোহন যাদবকে সিপিআই(মাওবাদী)-এর স্পেশাল জোনাল কমিটির তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২২ নভেম্বর অর্থাৎ গত শনিবার চিঠিটি পান তিন রাজ্যের সরকার। হিদমা নিহত হওয়ার ঠিক তিন দিন পরেই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। যদিও সোমবার এই চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে। চিঠিতে অনন্ত নামে এক সিপিআই(মাওবাদী)-এর স্পেশাল জোনাল কমিটির মুখপাত্রের স্বাক্ষর রয়েছে।

চিঠিতে ২০২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাওবাদী দমনে সরকারি অভিযান স্থগিত রাখার আর্জি জানানো হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে অস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণ করার কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘সরকারের পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ করতে রাজি আমরা। অস্ত্র ছেড়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে আগ্রহী। আমাদের অনুরোধ একটু সময় দেওয়া হোক। দলের নীতি মেনে একসঙ্গে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সময় লাগবে। ততদিন পর্যন্ত এই তিন রাজ্যের জঙ্গলে মাওবাদী দমন অভিযান বন্ধ থাকুক।‘


চিঠিতে মুখপাত্র অনন্ত আরও লিখেছেন, ‘এই সময়টা হয়তো দীর্ঘ।  তবে কেন্দ্রীয় সরকার মাওবাদী মুক্ত করার ডেডলাইন দিয়েছে ৩১ মার্চ, ২০২৬। তার মধ্যেই আমরা আত্মসমর্পণ করার লক্ষ্যে এগোচ্ছি। আমরা এবার আর পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি সপ্তাহ পালন করব না। ততদিন আমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযান যাতে না হয়, তার অনুরোধ রইল। এমনকী গোপন সূত্রের ভিত্তিতেও জঙ্গলে কোনও অভিযান করা যাবে না। পাশাপাশি ইনফরমারদেরও তথ্য আদানপ্রদানের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।‘

উল্লেখ্য, প্রতি বছর ডিসেম্বরের ২ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত মাওবাদীরা গেরিলা বিপ্লব সপ্তাহ হিসেবে পালন করে। এ সময় মাওবাদী প্রভাবিত এলাকাগুলিতে তাদের সক্রিয়তা বাড়ে। তবে এবার তিন রাজ্যে আত্মসমর্পণের প্রাক শর্ত হিসেবে তারা ওই সপ্তাহ পালন করবে না বলেই জানিয়েছে।

সম্প্রতি মাওবাদীদের বেশ কয়েক জন শীর্ষনেতা আত্মসমর্পণ করেছেন। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যৌথ বাহিনীর অভিযান। গত সপ্তাহেই অন্ধ্রপ্রদেশে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মাওবাদীদের অন্যতম শীর্ষনেতা মাধী হিদমা নিহত হন। তার কয়েক দিন পরেই মাওবাদী নেতৃত্বের এই আর্জি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যে দেশ থেকে মাওবাদকে নির্মূল করার জন্য সময়সীমা  বেঁধে দিয়েছেন। ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে এই ডেডলাইনের কথা মনেও করিয়ে দিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় মাওবাদী নেতা অনন্ত তিন রাজ্যের সরকারকে চিঠি দিয়ে অভিযান বন্ধ রাখার এবং সংযম দেখানোর আর্জি জানিয়েছেন। এর পিছনে কোনও গোপন উদ্দেশ্য নেই বলেও চিঠিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে।