মাওবাদী নেতা কিষেণজির ভাইয়ের আত্মসমর্পণ। ৬০ জন সহযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে মহারাষ্ট্রের গড়ছিরৌলিতে আত্মসমর্পণ মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাওয়ের। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)দলের পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের এই মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। সোমবার গভীর রাতে গড়ছিরৌলিতে ৬০ জন মাওবাদী সদস্যকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করেন বেণুগোপাল ওরফে সোনু।
গত সেপ্টেম্বর মাসে অস্ত্রসমর্পণ নিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন বেণুগোপাল। বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছিলেন, ‘দলকে বাঁচাতে সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ করার সময় এসেছে।’ গত এপ্রিল মাসে সোনুর নাম করে একটি ‘শান্তিবার্তা’ পায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাতে হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত মাওবাদী পলিটব্যুরো বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্রকে শান্তি আলোচনা এবং সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়। তার পর থেকেই বেণুগোপাল আত্মসমর্পণ করবে বলে বিভিন্ন মহলে জল্পনা শুরু হয়।
২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর নিহত হন কিষেণজি। ঝাড়গ্রামের বুড়িশোলের জঙ্গলে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর। বেণুগোপাল সেই কিষেণজিরই ভাই। ভূপতি, রাজন, বিবেক, অভয় এবং সোনু নামে বেণুগোপাল পরিচিত ছিলেন। ৭০ বছরের এই নেতা দলের আদর্শিক প্রধান হওয়ার পাশাপাশি যোগাযোগ সংক্রান্ত বিষগুলো দেখতেন।
আটের দশকে পিপল্স ওয়ার গ্রুপে যোগ দেন বেণুগোপাল। ২০১০ সালে সিপিআই-র মুখপাত্র হিসাবে নিযুক্ত হন। লালগড় অভিযানে কিষেণজির মৃত্যুর পর অভিযানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনিই। উল্লেখ্য, চলতি বছরের গোড়ায় মাওবাদী উপদ্রুত রাজ্যগুলিতে নিরাপত্তাবাহিনীর নতুন করে অভিযান শুরুর পর আত্মসমর্পণ করেন বেণুগোপালের স্ত্রী বিমলা চন্দ সিদাম ওরফে তারাক্কা। পিএলজিএ-র কমান্ডার এবং দণ্ডকারণ্য জোনাল কমিটির নেত্রী বিমলাও ছিলেন দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঘটনাচক্রে, তার ১০ মাসের মধ্যে বেণুগোপালও আত্মসমর্পণ করলেন।
সেপ্টেম্বর মাসে বেণুগোপালের অস্ত্রসমর্পণের বার্তাটি প্রকাশ্যে আসার পর সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। অনেকে তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ও বলেন। তবে বেণুগোপালে ওই চিঠি অনেকের সমর্থনও পেয়েছিল। ছত্তিশগড় এবং মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকার মাওবাদী ক্যাডারদের একটি অংশ তাঁকে সমর্থন জানায়। বেণুগোপালের এই আত্মসমর্পণ সিপিআই-র জন্য একটি বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে।
ছাব্বিশের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশকে মাওবাদী মুক্ত করা ডাক দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই লক্ষ্যে ছত্তীশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলাঙ্গানার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে মাওবাদী অভিযান চালায় সরকার। যৌথ বাহিনীর টানা অভিযানে সিপিআই (মাওবাদী)-এর সাধারণ সম্পাদক বাসবরাজ এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিবেক-সহ বেশ কয়েক জন নিহত হয়েছেন।
আত্মসমর্পণ করেছেন একের পর এক মাওবাদী। তবে ছত্তিশড়ের বিজাপুরে এখনও বেশ কিছু মাওবাদী আছে বলে খবর। সোমবারই মাওবাদীদের হাতে খুন হয়েছেন বিজেপি কর্মী সত্যম পুনম। ঘটনাস্থল থেকে একটি হাতে লেখা পোস্টারও উদ্ধার হয়েছে। মাওবাদী মাডেড এরিয়া কমিটির নাম করে চিঠিতে লেখা হয়েছে, পুলিশের চরবৃত্তি করার ‘শাস্তি’ হিসাবেই খুন করা হয়েছে পুনমকে।