দিদির থাপ্পড় আমার আশীর্বাদ : মোদি

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মােদি (File Photo: Twitter/PIB)

প্রচারের একেবারে শেষ মুহূর্তে একসাথে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে জমে উঠল পুরুলিয়ার রাজনীতি।

এদিন মাত্র কয়েক কিমির ব্যবধানে দুই জনসভা থেকে একে অপরকে সমানে আক্রমণ করে গেলেন দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। দুজনেই সাধাণ মানুষের জন্য কত কি করেছেন, দিলেন তার ফিরিস্তি।

বৃহস্পতিবার বেলা বারােটা নাগাদ কপ্টারে করে পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে রায়বাঘিনীর মাঠে জনসভায় পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। ততক্ষণে সভাস্থল কানায় কানায় ভর্তি।


প্রায় পঁচিশ মিনিটের বক্তৃতায় তিনি প্রথমেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। এরপর প্রত্যাশিতভাবেই তিনি তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন রাজ্যের তৃণমূল সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। গত মঙ্গলবার মমতা সাঁতুড়িতে একটি জনসভায় মােদির গণতন্ত্রে থাপ্পড় মারার কথা বলেছিলেন। এদিন তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তাে আপনাকে দিদি বলি, আপনার থাপ্পড় আমার জন্য আশীর্বাদ। আমি থাপ্পড় খেয়ে নেব। কিন্তু তার সাথে বলব, যদি আপনি নিজের সাথীদের যারা চিট ফান্ডের নামে গরিবদের টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের আগে থাপ্পড় মারতেন তবে আজ আপনাকে এতটা ভয় পেতে হত না।

এদিন নিজের পঁচিশ মিনিটের বক্তৃতায় অধিকাংশ সময় তৃণমূলকে সমানে আক্রমণ করেন। মা মাটি মানুষের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে মা নিজের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। তিনি কাঁদছেন। মাটি নির্দোষ নাগরিকদের রক্তে লাল হয়ে গেছে। আর মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

তৃণমলের পতন শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২৩ মে প্রথম ধাক্কা পাবেন তিনি। এরপর থেকেই শেষের শুরু। অনুপ্রবেশকারীদের দলের কর্মী বানাচ্ছে তৃণমূল বলে নরেন্দ্র মােদি বলেন, এদের প্রত্যেককে সনাক্ত করা হবে। এরপর উপযুক্ত ব্যবস্থা।

পুরুলিয়ার কথা বেশ কয়েকবার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই জেলা বাংলাকে পথ দেখায়। এই জেলা কালাে সােনার উপর দাঁড়িয়ে থাকলেও না বামফ্রন্ট না তৃণমূল কোনও সরকারই উন্নয়ন করেনি। এই রাজ্যে মাফিয়াদের সরকারের অংশ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এরপৱ ভাঙ্গা বাংলাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন মাফিয়া আর অনুপ্রবেশকারীদের জন্য যখন রাজনীতি করা হয় তখন আদিবাসী জনজাতিদের উন্নয়নের কথা মনে থাকে না। পশ্চিমবাংলায় এটাই হয়ে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজের ভাইপাের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য শুধু কাজ করছেন বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

কবিগুরুর প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, তিনি মাথা উচু করে বাঁচার কথা বলেছিলেন, ভােট দেবার জন্য এখানকার মানুষকে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়। বিরােধী দলের সদস্যদের খুন পর্যন্ত করা হয়। রামের নাম নিলে জেলে পাঠানাের ভয় দেখানাে হয়। একথা বলার সাথে সাথে মােদি নিজস্ব ঢঙে বলেন, যার খুন হয়েছে তাদের জীবন দান বেকার হতে দেবেন না।

তিনি এদিন সভায় ভিড় দেখে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী। খানিকটা আবেগ নিয়েই তিনি বলেন, যে ভালবাসা এখানকার মানুষ তাঁকে দিয়েছে তা সুদ সমেত ফেরত দেবেন। জনসভা শুরুর প্রথম দিকে খানিকটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিলেও পরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে বিপুল মানুষ এদিন তাঁকে দেখতে আসায় বেশ কয়েক ঘন্টা অবরুদ্ধ হয়ে যায় ৩২ নং জাতীয় সড়ক।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সভায় অল্প সময় পরেই পুরুলিয়া শহর লাগােয়া শিমুলিয়ায় তৃণমূলের জনসভায় যােগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম থেকেই তিনি আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রীকে। নিজেদের রাজ্যগুলােকে একটাও সেন্ট্রাল ফোর্স না পাঠিয়ে বিজেপি সেখানে ভােট লুঠ করেছে বলে অভিযােগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এ রাজ্যের পরিস্থিতি বলতে গিয়ে তিনি বলেন মােদি খুব ভালো করে জানেন যে তিনি এখানে হারছেন। দাঙ্গা লাগিয়ে সিট পাবার চেষ্টা করছেন তিনি। রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মমতা ব্যানার্জি কি করেছে সবাই জানে। পুরুলিয়ায় আগুন জ্বলছিল। বাঁকুড়ায় আগুন জ্বলছিল। মমতা ব্যানার্জি শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছে।

এরপর একে একে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর করা বিভিন্ন প্রকল্পের নাম উল্লেখ করেন। স্বাস্থ্যসাথী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহিলারা এই কার্ড পাবেন। পরিবার পাঁচ লক্ষ টাকার বিনামুল্যে চিকিৎসা পাবে।

বিজেপি শাসিত ঝাড়খন্ডের কথা তুলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলন, ওই রাজ্যে আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, উনি ৪৫ বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি বেকার বাড়িয়েছেন। আর এই রাজ্যে চল্লিশ শতাংশ বেকার কমিয়েছে।  প্রধানমন্ত্রী কিছু জানেন না। হােমওয়ার্ক করেন না বলেও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর কয়লা মাফিয়া প্রসঙ্গে মমতা বলেন, কয়লা মন্ত্রক কার অধীনে? কয়লা পাহারা দেয় সিআইএসএফ। কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে রাজ্যে কি করে কয়লা নিয়ে দুর্নীতি করবে? কয়লা থেকে গরু সব মাফিয়াগিরিতেই বিজেপি জড়িত বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। নরেন্দ্র মােদির জনসভায় বিশৃঙ্খলার প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, বিজেপির লােকেরা কেন্দ্রীয় বাহিনী ও এসপিজির সামনে রাজ্য পুলিশকে চেয়ার আর জলের বােতল ছুঁড়ে মেরেছে। এটা লজ্জা পাবার মত।

প্রধানমন্ত্রী একটা মিটিং ঠিক ভাবে করতে পারেন না দাবি করে মমতা বলেন, তাঁর সভার শৃঙ্খলা দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। এদিন মােদিকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এই মােদিকে হঠাতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী শুধু ভােট চাইতে এখানে আসেন। পুরুলিয়ার সমস্যার সময় তাঁকে দেখা যায় না