বিহার ভোটে নীতীশ-মোদী জোটের জয় জয়কার। শুক্রবার সকাল থেকেই ভোট গণনায় এগিয়ে ছিল এনডিএ জোট। বেলা যত গড়াতে থাকে ভোটের ফলাফল আরও স্পষ্ট হয়ে যায়। রেকর্ড সংখ্যক সিটে এগিয়ে যায় জোট। বিহারের জনাদেশ ফের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন নীতীশ কুমার। নীতীশের এই জয়ের পিছনে মহিলা ভোট ব্যাঙ্ক ফ্যাক্টার হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর বিহারে সবচেয়ে বেশি হারে ভোটদান হয়েছে এ বার। আর মহিলা ভোটদানের হার এক লাফে বেড়ে ১২ শতাংশে পৌঁছে যায় বলে খবর।
বিহারে গত কয়েকটি ভোটে দেখা গিয়েছে, মহিলাদের ভোটদানের হার পুরুষদের তুলনায় বেশি। পুরুষদের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি ভোট দিয়েছেন মহিলা ভোটাররা। মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনার যে কামাল দেখিয়েছে তা বোঝাই যাচ্ছে। ভোটের আগে রাজ্যের ১ কোটি ২১ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১০ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়। মহিলাদের ক্ষমতায়ণের জন্য এভাবে সরাসরি নগদ দেওয়ার প্রকল্প প্রথমে শুরু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একুশের ভোটের ইস্তেহারে লক্ষ্ণীর ভাণ্ডার যোজনার ঘোষণা করেছিলেন মমতা। তার পর ভোটে জিতে চার মাসের মধ্যেই লক্ষ্ণীর ভাণ্ডার প্রকল্প শুরু করেন। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে সেই খাতে ভাতা বাড়িয়ে দ্বিগুণও করে দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পের সুবাদে গোটা বাংলায় মহিলাদের মধ্যে শুধু ২ কোটির বেশি উপভোক্তা শ্রেণি তৈরি করেননি, জনভিত্তিও মজবুত করেন তিনি।
মমতার এই অনুদানকে খয়রাতি রাজনীতি বলে খোঁচা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অথচ মমতার দেখানো সেই পথই অনুসরণ করা হচ্ছে ওড়িশা থেকে মহারাষ্ট্র বিভিন্ন রাজ্যে। আর এবার বিহার ভোটের ঠিক মুখে প্রথম দফায় রাজ্যের ৭০ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা পাঠানোর কাজটি করেন সেই মোদীই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, নীতীশের ঘোষণা করা ওই একটা প্রকল্পই গেম চেঞ্জার হয়ে উঠেছে। বিহারে মহিলাদের কাছে নীতীশ কুমারের গ্রহণযোগ্যতা অনেক আগে থেকেই ছিল। ২০০৫ সালে নীতীশ কুমার প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই স্কুল পড়ুয়া মহিলাদের সাইকেল দিয়েছিলেন।
এখন তাঁরা অনেকেই গৃহবধূ। এই ভোটের আগে মহিলারা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। এ ছাড়া বিহারে মদ নিষিদ্ধ, পুলিশের চাকরিতে মহিলাদের বাধ্যতামূলক সংরক্ষণ, পঞ্চায়েতে ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ সবই মহিলা জনভিত্তিকে ধারাবাহিক ভাবে মজবুত করেছে।
তবে বিজেপি নেতাদের মতে, শুধু মহিলা ভোট নয়, বিহারে এবার হিন্দু ভোটেরও তীব্র মেরুকরণ হয়েছে। তার ফলে লালু প্রসাদের যাদব ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামিয়ে বিজেপি প্রচুর যাদব ভোটও পেয়েছে। সেই সঙ্গে তফসিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়রাও এনডিএ-কে ভোট দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সব ফ্যাক্টরই বিহারে এনডিএ জোটকে জেতানোর পিছনে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।