বাংলার মনীষীদের অপমান এবং মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (মনরেগা)-র নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে শুক্রবার সংসদ চত্বরে সরব তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদের সিঁড়িতে তৃণমূল সাংসদদের ধর্না মঞ্চে হাজির হয়ে সংহতি জানালেন সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ তথা বর্ষীয়ান অভিনেত্রী জয়া বচ্চন। সেই মঞ্চ থেকেই ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে বড় ঘোষণা করে নিজের চেনা হুঙ্কার দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলায় আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার গড়বে।’
প্রবাসী হলেও জন্মসূত্রে বাঙালি জয়া বচ্চন নিজের শিকড়ের কথা অকপটে তুলে ধরেন। তিনি জানান, তাঁর বাবা তরুণ ভাদুড়ী ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি সাংবাদিক। যিনি ‘দ্য স্টেটসম্যান’-এ কাজ করেছেন। বাংলার মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর পরিবারের নাড়ির টান চিরকালীন। অতীতেও তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শুক্রবার সংসদ চত্বরে তৃণমূলের ধরনা মঞ্চে উপস্থিত থেকে শুধু রাজনৈতিক সংহতিই জানাননি, রবীন্দ্রসঙ্গীতে সুর মিলিয়ে নিজের বাঙালি পরিচয়কেও আরও একবার তুলে ধরেন জয়া। একই সঙ্গে তিনি জানান, ২০২৬ সালের নির্বাচনেও বাংলায় প্রচারে আসবেন।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকার মনরেগার নাম পরিবর্তন করে ‘জিরামজি’ করার যে প্রস্তাব এনেছে, তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই ইস্যুতেই সংসদের সিঁড়িতে রাতভর ধরনায় বসেন তৃণমূল সাংসদরা। সেই প্রতিবাদে শামিল হয়ে জয়া বচ্চন বলেন, ‘বাঙালি মনীষীদের অপমান করে এবং গায়ের জোরে বিল পাশ করিয়ে বাংলার কণ্ঠরোধ করা যাবে না। যত অপমান করা হবে, বাংলার মানুষের মনোবল ততই বাড়বে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, ‘বাঙালিরাই দেশের ভবিষ্যৎ— তা তাঁদের চিন্তাধারা ও কাজেই স্পষ্ট। দেশের যে কোনও বড় নীতি বা পদক্ষেপের কথা বাংলার মানুষ অনেক আগেই ভেবে নেয়।’ তাঁর মতে, বাংলার মানুষ প্রগতিশীল এবং তাঁরা জানে কাদের হাতে রাজ্যের শাসনভার নিরাপদ। সেই বিশ্বাস থেকেই তিনি দৃঢ়ভাবে দাবি করেন, ২০২৬ সালেও বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জয়া বচ্চন ও তাঁর স্বামী অমিতাভ বচ্চনের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কথা অনেকেই জানা। মমতার ডাকে বহুবারই তাঁরা কলকাতায় এসেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী রাজনীতিতে সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেসের এই ঘনিষ্ঠতা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। জয়া বচ্চনের মতো বর্ষীয়ান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব যখন সরাসরি তৃণমূলের মঞ্চ থেকে মমতার জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেন, তখন তা রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করে।