নীতীশ সরকারের নির্দেশে সরকারি বাড়ি ছাড়ছেন লালু

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

বিহারে নয়া সরকার গঠনের পর থেকেই রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে। সেই উত্তাপ আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের সরকারি বাংলো খালি করার সিদ্ধান্তে। যদিও আরজেডি প্রথমে তীব্র আপত্তি তুলেছিল, শেষ পর্যন্ত সত্যিই ১০ সার্কুলার রোডের বাংলো ছাড়ছেন লালু। পরিবারের দাবি, এটি কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং অসুস্থ লালুর জন্য অত্যাবশ্যক ‘শান্তির ঠিকানা’ খোঁজারই উদ্যোগ।

জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিনের বাসস্থান ছেড়ে লালুকে নিয়ে যাদব পরিবার এখন এমন এক বাড়িতে উঠছেন, যেটি রাজনৈতিক কোলাহল থেকে অনেকটাই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শেই লালুর জন্য তৈরি হচ্ছে কঠোর ‘ভিজিট কন্ট্রোল’। কে কখন দেখা করবেন, তা আগেভাগেই জানাতে হবে। দলীয় কর্মীরাও ঢুকতে পারবেন কেবল অনুমতি থাকলে। অনিয়ন্ত্রিত জমায়েত, তড়িঘড়ি বৈঠক— সবই নিষিদ্ধ।

আরজেডি সূত্রের খবর, লালুর স্বাস্থ্যের অবনতি নিয়ে চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিয়মিত মেডিকেল টিম তাঁর দেখাশোনা করবে। মানসিক চাপ ও রাজনৈতিক ব্যস্ততা কমানোর লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত। ফলে নতুন বাড়িতে রাজনৈতিক আলোচনা চললেও তা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও কম মাত্রায় হবে।

এই ঘটনার পরই নীতীশ সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন লালুকন্যা রোহিণী আচার্য। এক্স-এ তিনি লিখেছেন, ‘লক্ষ মানুষের মসিহাকে অপমান করাই কি সুশাসন বাবুর উন্নয়ন? সরকারি বাড়ি থেকে সরালেই মানুষ লালুকে ভুলবে? বিহারের হৃদয় থেকে তাঁকে কে সরাতে পারবে?’ রোহিণীর দাবি, সরকার যেন অন্তত লালুর স্বাস্থ্য ও রাজনৈতিক মর্যাদাকে সম্মান করে।


তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই ‘ঘর বদল’ শুধু প্রশাসনিক বা স্বাস্থ্যগত সিদ্ধান্ত নয়— এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক বার্তাও। আরজেডি ঘনিষ্ঠদের কথায়, লালুর সময়ে বিহারের রাজনীতিতে যে ‘ওপেন হাউস’ সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, যেখানে সাধারণ মানুষ যে-কোনও সময় পৌঁছে যেতেন সমস্যার সমাধান খুঁজতে। ১ অ্যানে মার্গ থেকে ১০ সার্কুলার রোড— দু’টি ঠিকানাই ছিল আরজেডি-র অঘোষিত দপ্তর, গণপঞ্চায়েত।এবার সেই যুগের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে।

কিন্তু এখন তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে দল বদলে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৫ সালের নির্বাচনে লালু জমানার ‘জঙ্গলরাজ’-এর স্মৃতি আরজেডি-কে চাপে ফেলেছিল। লালুর ছায়া তরুণ নেতৃত্বের চলার পথেও বাধা তৈরি করছিল। তাই কঠোর ‘প্রাইভেসি জোন’-এ স্থানান্তর, আসলে ধীরে ধীরে লালুর রাজনৈতিক অন্তরালে চলে যাওয়ার নামান্তর। এভাবেই আরজেডি-র নতুন ভাবমূর্তি তুলে ধরা এবং ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনেরই সূচনা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘লালুর বাড়ি বদল আসলে বিহারের রাজনীতিতে এক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। মুক্ত জনপ্রবেশের রাজনীতির বদলে কৌশলনির্ভর সংগঠন— এটাই আরজেডি-র নতুন পথ।’ যদিও লালু এখনও দলীয় আবেগ ও আদর্শের কেন্দ্রবিন্দু, কিন্তু দৈনন্দিন রাজনীতি পরিচালনা এখন থেকে স্পষ্টতই তেজস্বীর হাতে।

অতএব, লালুর নতুন বাড়ি শুধু নতুন ঠিকানা নয়, এটি বিহারের রাজনীতির নতুন সমীকরণের প্রতীক। আরজেডি-র অতীত থেকে ভবিষ্যতের সেতুবন্ধনের এক রূপান্তরকালীন মুহূর্তের ইঙ্গিত।