জাতীয় নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ কেন্দ্রের, সোনম ওয়াংচুক গ্রেপ্তার

ফাইল চিত্র

লাদাখে অশান্তিতে প্ররোচনার দেওয়ার অভিযোগে শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুককে। সরকারি সূত্রে খবর, এদিন বেলা আড়াইটে নাগাদ লাদাখের ডিজিপি এসডি সিং জামওয়ালের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ওয়াংচুককে তাঁর লেহ-র বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে তাদের হেফাজতে নিয়েছে। লাদাখে অশান্তি এবং প্রাণহানির ঘটনার তিন দিনের মাথায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সোনম ওয়াংচুককে। তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন।

জাতীয় সুরক্ষা আইন তথা এনএসএ-র আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সোনম ওয়াংচুককে। লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করা এবং পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে বুধবার লাদাখের রাজধানী লেহ শহরে বিক্ষোভে সামিল হন কয়েক হাজার মানুষ, যাঁদের সিংহভাগই তরুণ। বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করলে লেহ-তে বিজেপির পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। শুধু তা-ই নয়, পার্টি অফিসের সামনে থাকা একটি পুলিশের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় পরিস্থিতি। সংঘর্ষে মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার জন্য সোনমের উস্কানিমূলক মন্তব্য দায়ী বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বৃহস্পতিবার জানায়।কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, ওয়াংচুকের অনশন এবং বক্তৃতা বিক্ষোভকারীদের উসকে দিয়েছিল। তার ফলেই সরকারি অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগ, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর এবং ৩০ জনের বেশি পুলিশ এবং সিআরপিএফ কর্মী আহত হন।

প্রসঙ্গত, কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাকে বিদেশি অনুদান নিতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। নির্দিষ্ট কিছু সরকারি ছাড়পত্রও নিতে হয়। সেই শর্ত ভাঙলে এফসিআরএ ধারায় মামলা দায়ের করা হতে পারে। সোনমের সংস্থা ‘হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অল্টারনেটিভস লাদাখ’ তথা এইচআইএএল এবং ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ’ তথা এসইসিএমওএল-এর বিরুদ্ধে নিয়ম ভেঙে বিদেশি অনুদান নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন তথা এফসিআরএ লঙ্ঘনের অভিযোগে পদক্ষেপ করে অমিত শাহের মন্ত্রক। সোনমের সংস্থা ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ’-এর এফসিআরএ লাইসেন্স বাতিল করা হয়।


সোনমের সংস্থা এসইসিএমওএল এবং ‘হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অল্টারনেটিভস লাদাখ’ এবং ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ’ -এর বিরুদ্ধে নিয়ম ভেঙে বিদেশি অনুদান নেওয়ার অভিযোগে চলতি মাসে সিবিআই তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। বৃহস্পতিবারই সোনম জানান, প্রায় দিন দশেক আগে সিবিআই-এর তদন্তকারী দল সরকারি নির্দেশনামা নিয়ে তাঁর কাছে এসেছিল। প্রসঙ্গত, লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্গত করা এবং পরবর্তী পর্যায়ে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩৫ দিনের জন্য অনশনে বসেছিলেন ওয়াংচুক-সহ ‘লেহ অ্যাপেক্স বডি’-র কয়েক জন সদস্য। আর তার পরেই সিবিআই-এর নিশানা হন তিনি।
এদিকে লাদাখে লেহতে বুধবারের হিংসাত্মক ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্ফু জারি করা হয়।

কার্ফু জারি করেন লাদাখের উপরাজ্যপাল। সেই কার্ফু এখনও বলবৎ রয়েছে। লেহ শহরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সব স্কুল-কলেজ ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বুধবারের পর বৃহস্পতিবার থেকেই কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে লাদাখের পরিস্থিতি। শুক্রবার সকাল থেকেই লেহ-সহ গোটা লাদাখের পরিস্থিতি থমথমে হয়ে যায়। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কঠোর করা হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে পাঠানো হয়েছে একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল। শুক্রবার সকাল থেকে দফায় দফায় লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকও হয়েছে বলে সূত্রের খবর।পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন লাদাখের উপরাজ্যপাল কবীন্দ্র গুপ্ত। পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘লাদাখের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি এখনও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।’ এদিকে বুধবারের হিংসার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ।

এদিকে সোনম ওয়াংচুকের গ্রেপ্তারের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘ওয়াংচুকের গ্রেপ্তার দুঃখজনক, তবে আশ্চর্যজনক নয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তার প্রতিশ্রুতি কেন রাখছে না, তাও বোধগম্য নয়।’ লাদাখের সাংসদ হাজি হানিফা বলেছেন, ‘যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে, তবে আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’ কংগ্রেস নেতা জি এ মীর বলেছেন, ‘একজন সম্মানীয় ও গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত কর্মীকে গ্রেপ্তার করা অপ্রয়োজনীয় ও অন্যায়।’ আগামী ৬ অক্টোবর লাদাখের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে কেন্দ্রের।