স্থানীয় স্তরে নির্বাচন ব্যালটে করার সিদ্ধান্ত কর্ণাটক সরকারের

ইভিএম নয়, নির্বাচন হোক ব্যালট পেপারে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সুপারিশ করেছে কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার। দেশজুড়ে ইভিএম-এর বিরুদ্ধে জনমত গঠনের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। ভোটার তালিকা নিয়ে সম্প্রতি কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার ভুয়ো ভোটার ইস্যুতে সরব হয়েছেন। ইভিএম নিয়ে এর আগেও একাধিকবার আপত্তি জানিয়েছে বিরুোধীরা। বিজেপি ইভিএম-এ কারচুপি করে জেতে এই অভিযোগে সোচ্চার হয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলি। যদিও সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার শুনানিতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ব্যালট পেপারে নির্বাচনের আয়োজন করা এখন অসম্ভব।

ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ রাস্তায় নেমেছেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু ইভিএমও যে সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় সেটা বুঝিয়ে দিতে নিজেদের দখলে থাকা রাজ্যে ব্যালট ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাত শিবির। কর্ণাটকে সিদ্দারামাইয়ার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস মন্ত্রিসভা মনে করে স্থানীয় নির্বাচনে ব্যালট পেপার ব্যবহার করা দরকার। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে বোঝা যাবে, এই ব্যবস্থা কতটা কার্যকরী। ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আইন ও পরিষদীয় মন্ত্রী এইচ কে পাতিল সাংবাদিকদের বলেন, ইভিএম-এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একটা সময়ে ইভিএম-এর প্রতি মানুষের আস্থা ছিল। এখন আর নেই। সেই কারণে ক্যাবিনেট চায় স্থানীয় নির্বাচন ব্যালট পেপারে হোক। কর্নাটকের রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। ভোট করাতে হবে ব্যালট পেপারে। রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ, বিজেপি দেখাক যে ইভিএম ছাড়াও তারা জিততে পারে।

স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম-এর ব্যবহার আইনি পথে বন্ধ করতে ১৯৯৩ সালের গ্রাম স্বরাজ আইন সংশোধন করতে হবে। পাশাপাশি পুরসভা পরিচালন সংক্রান্ত একটি আইন এবং ২০০৪ সালে পাশে হওয়া বেঙ্গালুরু পৌরনিগম বিষয়ক একটি আইনেরও সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।তবে মন্ত্রী এও জানিয়েছেন, এখন যা পরিস্থিতি তাতে কমিশন সরকারের সিদ্ধান্ত নাও মানতে পারে। কিন্তু একবার আইন সংশোধন হয়ে গেলে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ইভিএম-এর বদলে ব্যালট পেপারে নির্বাচন করতে হবে। এই অবস্থায় ১৫ দিনের মধ্যে বিধানসভার অধিবেশনে আইনে সংশোধন করতে চায় সরকার।


এখন প্রশ্ন হল, ২০২৩-এ কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। ইভিএম-এ কারচুপি হলে বিজেপিকে কীভাবে হারানো সম্ভব হলো? মন্ত্রীর জবাব, ‘মানুষ আমাদের উপর আস্থা রেখেছিলেন। সম্পূর্ণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা ১৭০টি আসনে জিততাম।’ স্থানীয় স্তরে নির্বাচনের জন্য আলাদা ভোটার তালিকা তৈরির চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের। এতদিন পর্যন্ত বিধানসভা ভোটের তালিকা ধরেই স্থানীয় স্তরে নির্বাচন হত। এবার এই ব্যবস্থাতেও বদল আনার কথা ভাবছে কর্ণাটক সরকার।

এদিকে ইভিএম নিয়ে এর আগে সর্বদল বৈঠকের ডাক দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের দাবি ছিল, কোনওভাবেই ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব নয়। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে ওপেন চ্যালেঞ্জও দিয়েছিল কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলিকে ইভিএম হ্যাক করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু বড় রাজনৈতিক দলগুলির কোনওটিই সেই চ্যালেঞ্জে অংশ নেয়নি। বিজেপি অবশ্য শুরু থেকেই ইভিএম দুর্নীতির অভিযোগকে আমল দেয়নি। শাসক শিবিরের দাবি ছিল নিজেদের পরাজয়ের ব্যর্থতা ঢাকতে ইভিএমকে ঢাল করছে বিরোধীরা।