সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে শপথ নিলেন বিচারপতি সূর্য কান্ত

ভারতের ৫৩ তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন বিচারপতি সূর্য কান্ত। সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে এক অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু হিন্দিতে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর মেয়াদকাল ২০২৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

রাষ্ট্রপতিভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি সি পি রাধাকৃষ্ণণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্পিকার ওম বিড়লা, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই, রাজ্যসভার দলনেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা।

শপথ গ্রহণ করার পর মা, বাবা ও পরিবারের গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন প্রধান বিচারপতি। সূর্য কান্তের ব্যক্তিগত আমন্ত্রিতদের তালিকায় ছিলেন তাঁর স্কুল কলেজের বন্ধু, শিক্ষক, গ্রামের পাড়া-প্রতিবেশী মিলিয়ে প্রায় হাজার জন। এঁদের মধ্যে ২৩৫ জন রাষ্ট্রপতি ভবনে এসেছিলেন। বাকিরা সুপ্রিম কোর্টের অডিটোরিয়ামে বসে দেখেছেন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান।


প্রধান বিচারপতি অবসর গ্রহণের মাসখানেক আগে থেকেই পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। গত মাসে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই নিয়োগের জন্য কেন্দ্রকে তাঁর নাম সুপারিশ হিসেবে পাঠান। এরপরেই রাষ্ট্রপতি মুর্মু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্তকে ভারতের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন। রবিবার অবসর নিয়েছেন ৬৫ বছরের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই। তাঁর জায়গায় সোমবার শপথ নিলেন প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত। ২০২৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই পদে থাকবেন তিনি।

বিচারপতি হিসেবে দুই দশকের কর্মজীবনে তাঁর।  বিচারপতি সূর্য কান্ত অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রায়ের মধ্যে রয়েছে কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল থেকে পেগাসাস সফটওয়ার মামলা। ব্রিটিশ জমানার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বাতিল হয়ে যায় তাঁরই এজলাসে। রাষ্ট্র বিচার বিভাগীয় তদন্ত এড়াতে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না, এই রায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন বিচারপতি সূর্য কান্ত।

১৯৬২ সালে হরিয়ানার পেটোয়ারে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছিলেন বিচারপতি সূর্যকান্ত কান্ত। পড়াশোনা করন গ্রামেরই সরকারি প্রাথমিক ও হাইস্কুলে। ম্যাট্রিকুলেশন পর্যন্ত গ্রামেই লেখাপড়া করেন। স্কুলে পড়ার শেষে চাষের খেতে কাজ করতেন। আইন পাশ করেন ১৯৮৪ সালে রোহতকের মহর্ষি দয়ানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। হিসার জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরুর পর ১৯৮৫ সালে পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে কাজ করেন। ২০০০ সালে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে তিনি হরিয়ানার সর্বকনিষ্ঠ অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে চাকরি পান। হরিয়ানা থেকেই তিনিই প্রথম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বভার নিলেন। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে হরিয়ানা থেকে কেউ প্রধান বিচারপতি হননি।

২০০৪ সালে বিচারপতি সূর্য কান্ত পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হন। পরের বছরই মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির দায়িত্বে চলে আসেন।  প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, আমার মতোই বিচারপতি কান্তও সমাজের সেই শ্রেণির প্রতিনিধি, যাঁরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লড়াই করে এসেছেন। যাঁদের জন্য আইনের রক্ষাকবচ প্রয়োজন তাঁদের অধিকার তাঁর মতোই একজন মানুষের হাতে সুরক্ষিত থাকবে।