জাতীয়তাবাদের ধ্বজাধারীরা

সাধারণ নির্বাচনের দিনগুলি যত এগিয়ে আসছে,ততই দেশের আনাচে-কানাচে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নরেন্দ্র -মোদি দ্বিতীয়বার বাড়িতে ফিরে এলে দেশে যে পরিবর্তন হবে তা কতটা সুদূরপ্রসারী?মোদিবাবুর জেতার প্রশ্ন উঠছে, তার কারণ সর্বভারতীয় স্তরে জোট গঠনে কংগ্রেস এবং বাম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অবিমিশ্রকারিতা।তাঁরা কেন্দ্রে এককথা বলছেন, রাজ্যে অন্য কথা বলছেন।রাজ্যে বসে বোঝা যাচ্ছে না নির্বাচনটা বিধানসভা না লোকসভার? ভারতের পূর্ব এবং দক্ষিণের মানুষ বিজেপিকে একটি রাজনৈতিক দল হিসাবেই চেনে। কিন্তু উত্তর ও পশ্চিম ভারতের মানুষজন হাড়ে হাড়ে  এই দলটিকে চিনেছেন।২০১৪ সালের পর ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছে বিজেপি আরএসএস-এর হিন্দুত্ববাদী ভারতের রূপরেখা।এটা স্পষ্ট যে দেশ পরিচালনায় মাধ্যমে নির্বাচকদের মন জয় করাতে বিজেপি মোটেই আগ্রহী নয়। তাদের চাহিদা আধিপত্য কায়েম করা।ধর্মের,বর্ণের,জাতির নানারকম পক্ষপাতের সাহায্যে এক শ্রেণির ওপর অন্য শ্রেণির আধিপত্য বিস্তার করা। বলাই বাহুল্য, এই মনোভাবটি সংবিধানবিরোধী বিজেপির সংবিধানের উপর আনুগত্য যে লোকদেখানো তার প্রচুর প্রমাণ আমরা ইতিমধ্যে পেয়েছি।বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা স্বাগত, অন্যরা নন, সেজন্য তৈরি হচ্ছে নতুন নাগরিক আইন।গোমাতার সেবকদের কাছে শহুরে শিক্ষিতরা, সমালোচকরা সব ‘আরবান নকশাল’। উল্টো সুরে কথা বললেই নিদান – গো টু পাকিস্তান। এই নির্বাচনে যদি মোদি পর্বের অবসান হয়, তবে ব্যাপারগুলিকে স্বল্পস্থায়ী বলে মেনে নেয়া যেত।কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করা যাচ্ছে গত পাঁচ বছরে মোদিবাবু যেসব উদ্ভট কাণ্ডকারখানা করেছেন, কথাবার্তা বলেছেন তা অনেকের কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।এর মধ্যে রয়েছেন উচ্চশিক্ষিতরা, উঁচুদরের পেশাজীবিরা। এঁদের অনেকেই বিশেষ করে প্রবাসীরা এখন গেরুয়া জাতীয়তাবাদের ধ্বজাধারী। তাঁরা বুঝতে রাজি নন যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি তার দ্বারা হবে না বুঝেই তিনি বিভাজনের নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। যাঁরা মোদির প্রত্যাবর্তনের এই বিপজ্জনক পরিণতি দেখতে পাচ্ছেন না,সম্ভবত তাঁদের জন্যই রাইনোসেরস নাটকটি লিখেছিলেন ফরাসি নাট্যকার ইউনেস্ক।নাটকটিতে দেখা যাচ্ছে, ফ্রান্সের একটি শহরে লাগলো মড়ক,সকলেরই নাকের ডগাটা শক্ত হয়ে ফুলে উঠেছে, তারপর ক্রমশ সে পরিণত হচ্ছে গণ্ডারে।মোদিবাবুর আসল কৃতিত্ব বহু ভারতীয়কে তিনি গত পাঁচ বছরে গণ্ডারে পরিণত করেছেন।তাঁদের শক্ত চামড়ার উপর চাবুকের গা টের পাচ্ছেন না,কিন্তু বাকিরা?