মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কর্মরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত গবেষক ড. বদর খান সুরিকে আটক করা হয়েছে। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে। তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হামাসের হয়ে প্রচার চালাচ্ছিলেন। বদর খান সুরির বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইনের এই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকারও অভিযোগ এনেছে মার্কিন অভিবাসন দপ্তর।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই প্যালেস্টাইনের সমর্থনে মিছিলে হাঁটা, স্লোগান দেওয়া এবং হামাসের হয়ে প্রকাশ্যে প্রচারের অভিযোগে এক ভারতীয় পড়ুয়ার ভিসা বাতিল করে ট্রাম্প প্রশাসন।
প্যালেস্টাইনের সমর্থনে কথা বলার জন্য আরও এক ভারতীয় গবেষকের ভিসা প্রত্যাহার করে নিল আমেরিকা। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিওরিটি দপ্তর সূত্রে খবর, ‘ইহুদিবিদ্বেষ ছড়ানো’ এবং প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ রাখার অভিযোগে চলতি সপ্তাহের সোমবার তাঁকে আটক করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর ধরে আমেরিকায় থাকতেন সুরি। বিয়ে করেছিলেন মার্কিন এক মহিলাকে। ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পাশাপাশি সেখানকার ছাত্রদের পড়াতেন তিনি। সোমবার রাতে ভার্জিনিয়ায় নিজের বাড়ির বাইরে থেকে সুরিকে গ্রেপ্তার করা হয়। জানানো হয়, তাঁর ভিসা বাতিল করা হচ্ছে। সুরির বিরুদ্ধে মার্কিন অভিবাসন আইনের একটি খুব কম ব্যবহৃত ধারা ব্যবহার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই ধারা অনুযায়ী, যে সব অভিবাসী আমেরিকার জন্য ‘ক্ষতিকর’, তাঁদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে পারে বিদেশ দপ্তর।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সুরির ভিসা প্রত্যাহারে সায় রয়েছে সে দেশের বিদেশসচিব মার্কো রুবিও-র। বিদেশ দপ্তরের যুক্তি, ওই ভারতীয় গবেষকের কার্যকলাপের কারণেই তাঁকে ‘বহিষ্কার’ এর সিদ্ধান্ত। শীঘ্রই তাঁকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে। যদিও সুরির আইনজীবী সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ‘জন্মসূত্রে সুরির আমেরিকান স্ত্রীর প্যালেস্টাইন-যোগ রয়েছে। সে কারণেই তাঁকে নিশানা করা হচ্ছে।’
গত দেড় বছর গাজায় হামাসের সঙ্গে ইজরায়েলের যুদ্ধ চলছে। প্রথম থেকেই এই লড়াইয়ে ইহুদি দেশটির পাশে রয়েছে আমেরিকা। যা নিয়ে প্রাক্তন মার্কিন বাইডেনকে কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি। গাজার মৃত্যুমিছিল নিয়ে ওয়াশিংটনের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখিয়ে প্যালেস্টাইনপন্থীরা। পড়ুয়াদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে একাধিক বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ও। মাঝেমধ্যেই প্যালেস্টাইনকে ‘মুক্ত’ করার দাবিতে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে পড়ুয়াদের মিছিলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। কারা এসব করছে, তা মার্কিন প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে থাকে।
কয়েকদিন আগে এভাবেই রঞ্জনী শ্রীনিবাসন নামে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি-র ছাত্রী নজরে পড়েছিল মার্কিন প্রশাসনের। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, হামাস জঙ্গিদের সমর্থন করে তিনি নানা কার্যকলাপ করছেন। তাঁরও ভিসা বাতিল করে দেওয়া হয়। মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তরফে তাঁকে আমেরিকা ছাড়ার জন্য ১১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয়। কিন্তু সেই ডেডলাইন শেষে হওয়ার আগে নিজেই আমেরিকা ছাড়েন রঞ্জনী।
এর আগে গত বছর একই যুক্তিতে আমেরিকা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এই কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরই আর এক ছাত্র মাহমুদ খলিলকে। অভিযোগ, প্যালেস্টাইনপন্থী বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন তিনিও। এ বিষয়ে হোমল্যান্ড সিকিওরিটি দফতরের সচিব ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, ‘আমেরিকায় বসবাস এবং পড়াশোনার জন্য ভিসা পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। যখন কেউ হিংসা এবং সন্ত্রাসবাদের পক্ষে কথা বলেন, তখন তাঁর সেই সুযোগ বাতিল হওয়া উচিত এবং তাঁর এই দেশে থাকা উচিত নয়।’