রেয়ার আর্থ বা বিরল খনিজ সরবরাহ শৃঙ্খলে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে আন্তর্জাতিক মহলে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা নতুন রেয়ার আর্থ নেটওয়ার্কে ভারতকে তৃতীয় স্তম্ভ হিসেবে যুক্ত করার সম্ভাবনা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক ট্রাম্প–শি বৈঠকের পর এই জল্পনা আরও জোরালো হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সময়ে ভারত কৌশলগতভাবে বিরল খনিজ বা রেয়ার আর্থ সরবরাহ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় উঠে আসতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিশ্বজুড়ে বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণে চীনের দীর্ঘদিনের প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান বিকল্প সরবরাহ চেইন তৈরি করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের বিশাল খনিজ ভান্ডার, ভূতাত্ত্বিক সম্ভাবনা, দক্ষ মানবসম্পদ এবং দ্রুত বাড়তে থাকা উৎপাদনভিত্তি দেশটিকে একটি শক্তিশালী অংশীদার করে তুলতে পারে।
সরকারি সংস্থা আইআরইএল–সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি সংস্থার সম্প্রসারিত কার্যক্রম ভারতের বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই খাতের ওপর রাজনৈতিক অগ্রাধিকার বাড়ানো হলে ভারত দ্রুত গ্লোবাল ভ্যালু জোটে নেতৃত্ব দিতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র–জাপান ইতিমধ্যেই একটি যৌথ ফ্রেমওয়ার্ক ঘোষণা করেছে, যেখানে খনন–গবেষণা, যৌথ তহবিল, প্রযুক্তি সহযোগিতা, কৌশলগত মজুত এবং প্রক্রিয়াকরণ উন্নয়নের মতো বিষয় রয়েছে। এই শৃঙ্খলে ভারত যোগ দিলে এই নেটওয়ার্ক আরও বহুপাক্ষিক, নিরাপদ ও মজবুত হবে।
তবে এখানে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা উন্নত প্রক্রিয়াকরণের সীমিত ক্ষমতা। বিশেষ করে নেডিওডিমিয়াম–ম্যাগনেট তৈরিতে দ্রুত বিনিয়োগ প্রয়োজন। পরিবেশগত ছাড়পত্র, স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ এবং পরিবেশগত সুরক্ষা নিয়েও কড়া নিয়ম মানতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘এটাই ভারতের সঠিক সময়। নীতি সংস্কার, প্রযুক্তি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব জোরদার করতে পারলে ভারত ভবিষ্যতের বিরল খনিজ সরবরাহ নেটওয়ার্কে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পাশে তৃতীয় প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠতে পারবে।’
পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে বিরল খনিজ জোটের কূটনীতিতে ভারতের গুরুত্ব নিঃসন্দেহে বাড়ছে। বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলের পরবর্তী অধ্যায়ে ভারতের ভূমিকা তাই এখন আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।