আমেরিকায় পণ্যে চড়া শুল্কের কারণে রপ্তানি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে ভারতের। মার্কিন বাজারে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাণিজ্যে বড় ধাক্কা খেয়েছে নয়াদিল্লি। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প বাজার খুঁজছে ভারত। নজর এখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র ফিলিপিন্সের দিকে। চাল সহ কৃষিজ পণ্যের রপ্তানির নতুন দিগন্ত খুলতে আগামী মাসেই সেদেশে প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। সরকারি সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ভারতে তৈরি বড় প্রতিনিধি দল যাবে ফিলিপিন্সে। সেই দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসে চাল এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানির বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবেন প্রতিনিধিরা। লক্ষ্য, বর্তমানের তুলনায় বহুগুণ রপ্তানি বাড়ানো।
বিশ্বের বৃহত্তম চাল আমদানিকারক দেশ ফিলিপিন্স। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে দেশটি প্রায় ২,০০০ কোটি ডলার মূল্যের কৃষিজাত পণ্য আমদানি করেছে। এর বড় অংশ জুড়ে ছিল চাল, গম, পাম তেল এবং বিভিন্ন খাদ্যপণ্য। কিন্তু ভারতের অংশ অবদান ছিল মাত্র ৪১.৩ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য, মোট আমদানির মাত্র দুই শতাংশ। এই বিশাল ঘাটতির দিকেই এবার নজর দিয়েছে নয়াদিল্লি। এক শীর্ষ সরকারি আধিকারিক জানাচ্ছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে আমরা প্রায় ১,১০০ কোটি ডলারের চাল রপ্তানি করেছি। তবু ফিলিপিন্সে সেই অনুপাতে চাল যায়নি। অথচ বাজার রয়েছে, সম্ভাবনাও প্রচুর।
চাল ছাড়াও বাদাম, তামাকজাত দ্রব্য ইত্যাদি পণ্যও ভারত থেকে ফিলিপিন্সে রপ্তানি হয়। এবার সেই তালিকা আরও প্রসারিত করে নতুন চুক্তির মাধ্যমে রপ্তানির বহর বাড়াতে চাইছে ভারত। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ফিলিপিন্সের মতো বৃহৎ আমদানিকারক দেশের বাজার ধরতে পারলে আমেরিকার বিকল্প শক্তিশালী রপ্তানি গন্তব্য তৈরি হবে ভারতের জন্য। উল্লেখ্য, আমেরিকা ভারতের পণ্যে প্রথমে ২৫ শতাংশ এবং পরে রাশিয়া থেকে খনিজ তেল কেনার প্রতিক্রিয়ায় আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের ফলে ভারতের বহু পণ্যের রপ্তানি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
আমেরিকার সর্বোচ্চ শুল্কহারভুক্ত দেশের তালিকায় এখন ভারতের সঙ্গে কেবল ব্রাজিল। ফলে এই পরিস্থিতিতে রপ্তানির জন্য নতুন বাজার খোঁজাই একমাত্র পথ বলে মনে করছে কেন্দ্র। ফিলিপিন্সে চালের বাজার ধরতে পারলে শুধু কৃষক নয়, দেশের সামগ্রিক কৃষি রপ্তানি খাতই এক নতুন মাত্রা পাবে, এমনই আশা করছেন বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তারাও।