সংসদে পেশ আয়কর বিল

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

লোকসভায় নতুন আয়কর বিল পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো নাগাদ তিনি এই বিল পেশ করেন। নতুন আয়কর বিল বর্তমানে চালু থাকা ১৯৬১ সালের আয়কর আইনের সরলীকরণ এবং পুনর্গঠনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানের বিলটি ১৯৬২ সাল থেকে কার্যকর হয়েছিল এবং ২৯৮টি ধারা সমন্বিত এই বিলে বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি সংশোধনী এসেছে যা করদাতাদের কাছে এই বিলকে আরও জটিল করে তুলেছে। নতুন বিলটি ৬২২ পৃষ্ঠার যার মধ্যে রয়েছে ৫৩৬টি ধারা, ২৩টি অধ্যায় এবং ১৬টি তফসিল। ‘মূল্যায়ন বর্ষ’ শব্দের পরিবর্তে এসেছে ‘করবর্ষ’। আর্থিক বছরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই করবর্ষ আনা হচ্ছে বলে খবর সূত্রের। এ ছাড়াও আইনে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।

নতুন আয়কর বিলটিতে আইনি শব্দগুলিকে সরলীকরণ এবং সংক্ষিপ্ত করে তোলায় বোঝা সহজ হবে। পুরনো আইনের জটিল ব্যাখ্যা এবং বিধান সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূল্যায়ন বর্ষের বদলে কর বর্ষ ধারণাটি চালু করা হয়েছে যা ১ এপ্রিল থেকে শুরু হবে এবং পরের বছর ৩১ মার্চ, অর্থাৎ ১২ মাস সময়কাল পর্যন্ত হিসেব করা হবে। নতুন বিল আইনে পরিণত হলে আয়কর জমা দেওয়া আরও সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে ‘মূল্যায়ন বর্ষ এবং ‘পূর্ববর্তী বর্ষ’— এই দুইয়ের উপর ভিত্তি করে জমা নেওয়া হয় আয়কর। কিন্তু, নতুন বিলে ‘করবর্ষ’ চালু করার কথা বলেছে সরকার।

নতুন বিলে ক্রিপ্টোকারেন্সি-সহ অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদকে সম্পত্তি বিভাগে রাখার কথা বলা হয়েছে। অর্থাত, এগুলি এখন থেকে মূলধনী সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তাদের উপর কর আরোপ করা হবে। স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে এবং কর ফাঁকি বন্ধ করতে ডিজিটাল লেনদেন এবং ক্রিপ্টোসম্পদের উপর কঠোর নিয়ম কার্যকর হয়েছে।


নতুন ব্যবসার জন্য কর বর্ষ নির্ধারণে নতুন নিয়ম আনা হয়েছে। যদি একটি নতুন ব্যবসা বা কাজ শুরু করা হয়, তাহলে তার করবর্ষ সেইদিন থেকে শুরু হবে এবং একই আর্থিক বছরের শেষে শেষ হবে।

নতুন আয়কর বিলে ৫৪ই ধারার মতো বেশকিছু অপ্রয়োজনীয় নিয়ম বাদ দেওয়া হয়েছে। এখানে আবাসিক বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি থেকে যে মুলধন লাগ হয় তার উপর কর কীভাবে সাশ্রয় করা যায় তার নিয়ম রয়েছে। এর সঙ্গেই আরও বেশ কিছু পুরনো নিয়ম এবং ছাড় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে যা এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়।

চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা। বাজেট বক্তৃতাতেই নতুন আয়কর বিল আনার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। এরপর গত সপ্তাহে প্রথামতো বিলকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভা। দেশের কর ব্যবস্থাকে সরল ও আধুনিক করতে নতুন বিলটি আনা হয়েছে বলে দাবি করেছে সরকার।

প্রসঙ্গত, নয়া বিল আনা হলেও নতুন করে কোনও আয়কর আরোপ করা হবে না বলে আগেই স্পষ্ট করেছিল কেন্দ্র। এ প্রসঙ্গে অর্থসচিব বলেন, ‘বিলটি আইনে পরিণত হলে আয়করের ক্ষেত্রে হ্রাস পাবে আইনি জটিলতা। করদাতারা সহজে অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।’

নতুন বিলে করদাতাদের একটি শংসাপত্রও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা করদাতাদের অধিকার রক্ষা করবে এবং কর প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করবে।