মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় এনআইএ বিশেষ আদালত সাত অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করেছে। প্রায় দেড় দশকের এই মামলায় আদালতে যাঁরা স্বস্তি পেলেন, তাঁরা হলেন– বিজেপি নেত্রী প্রজ্ঞা ঠাকুর, কর্নেল প্রসাদ, প্রাক্তন মেজর রমেশ উপধ্যায়, সুধাকর চতুর্বেদী, অজয় রাহিরকর, সুধাকর ধার দ্বিবেদী ওরফে আলিয়াস শংকরাচার্য এবং সমীর কুলকার্নি। তবে এই রায়ের জেরে ফের সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছেন ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদের’ মুখ বাংলার স্বামী অসীমানন্দ। কারণ, একসময় এই মামলায় তাঁর নাম জড়িয়েছিল। যদিও চার্জশিট থেকে পরে তাঁর নাম বাদ চলে যায়। কিন্তু এই রায়ের পর সকলের মনেই প্রশ্ন, কে এই অসীমানন্দ?
জানা গিয়েছে, প্রথমদিকে স্বামী অসীমানন্দ কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সেই কট্টর হিন্দুত্ববাদ তাঁকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দেয়। তিনি পরিচিত হন ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদী’র মুখ হিসেবে। ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনায় তাঁর নাম জড়ায়। ফলে গা ঢাকা দিতে কখনও তিনি কখনও তিনি নবকুমার, কখনওবা যতীন চট্টোপাধ্যায়, আবার কখনও ওঙ্কারনাথ নাম ধারণ করে ছদ্মবেশে ঘুরতে বেড়াতে শুরু করেন।
২০০২ সালের একটি ঘটনা তাঁর সংখ্যালঘু বিদ্বেষ এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এই বছর গুজরাটের গান্ধীনগরে অক্ষরধাম মন্দিরে জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রায় ৩০ জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়। এরপরই তিনি হিংসাশ্রয়ী পথে হাঁটতে শুরু করেন। নিরীহ দেশবাসীর প্রাণের বদলা নিতে তিনি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই ঘটনার সাত বছর পর থেকে অর্থাৎ ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের দেশে কমপক্ষে চারটি ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাগুলি হল– সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ (২০০৭), আজমের বিস্ফোরণ (২০০৭), মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণ (২০০৭) এবং মালেগাঁও বিস্ফোরণ (২০০৮)। এই বিস্ফোরণের প্রতিটিতে স্বামী অসীমানন্দের নাম জড়ায়। যদিও প্রতিটি মামলায় তিনি বেকসুর খালাস পেয়ে যান।
এদিকে তৎকালীন উত্তর প্রদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডে ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ তত্ত্ব তুলে ধরেন। তিনি এইসব বিস্ফোরণের পেছনে আরএসএস ও বিজেপির একাংশ জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তবে গেরুয়া শিবির সেই অভিযোগ অস্বীকার করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে। কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে বলে তারা দাবি করে।
উল্লেখ্য, স্বামী অসীমানন্দ একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য। তাঁর পারিবারিক ইতিহাস যথেষ্ট উজ্জ্বল। তাঁর বাবা বিভূতিভূষণ সরকার ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। অসীমানন্দ হলেন তাঁর দ্বিতীয় পুত্র। তিনি ছিলেন যথেষ্ট উচ্চ শিক্ষিত। অসীমানন্দ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এমএসসি করেন। এই সময়েই তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে (আরএসএস) যোগ দেন। এরপর বিভিন্ন আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিয় ১৯৮৮ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে সঙ্ঘের হয়ে প্রচারের কাজ শুরু করেন। কিন্তু পরে চরম মতবিরোধের কারণে অসীমানন্দ আরএসএস ত্যাগ করেন এবং অন্য একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘অভিনব ভারত’-এর সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৯০ সালের শেষের দিক থেকে তিনি গুজরাটের ডাং জেলায় পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। যেখানে তিনি ‘শবরী ধাম’ নামে একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন স্থাপন করেন। প্রথম থেকেই অসীমানন্দ সুবক্তা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বক্তৃতা করার জন্য একসময়ে তাঁর ডাক আসতো। সংখ্যালঘু এবং খ্রিস্টান মিশনারি বিরোধী প্রচারই ছিল তাঁর বক্তৃতার মূল লক্ষ্য।