বিহারে এসআইআর-এ বাদ পড়া ব্যক্তিদের নাম ফের কীভাবে ভোটার তালিকায় তোলা যাবে?

প্রতীকী চিত্র

এসআইআর বা বিশেষ নিবিড় সংশোধনের ফলে বিহার জুড়ে  মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস ধরে এই কাজ চলার পর গত ১ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সেই তালিকা খুলতেই দেখা গিয়েছে, প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। এর মধ্যে ২০ লক্ষ মৃত ভোটার বাদ দিলে ৪৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্য রাজ্যে চলে গিয়েছেন ২৮ লক্ষ ভোটার। ফলে তাঁরা আর বিহারে ভোট দিতে পারবেন না। ৭ লক্ষ ভোটারের নাম একের বেশি জায়গায় রয়েছে। সেজন্য তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি ১ লক্ষ ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এবং ১৫ লক্ষ ভোটার ভেরিফিকেশন ফর্ম জমা দেননি। তাঁরা সবাই এখন নতুন করে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য শশব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু যাঁদের নাম তালিকা থেকে একেবারে বাদ গিয়েছে, কীভাবে তাঁদের নাম তোলা যাবে এই ভোটার তালিকায়? তাঁরা কোন পথ ধরে এগোবেন?

জানা গিয়েছে, রুটিন মাফিক প্রতি বছর ভোটার তালিকা সংশোধন হলেও দুই দশক অন্তর বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজ হয়। বিহারে বিশেষ নিবিড় সংশোধন হয়েছিল ২০০৩ সালে। এরপর প্রায় ২২ বছর ২০২৫ সালে নিবিড় সংশোধনের কাজ হল। এদিকে চলতি বছরেই বিহারে বিধানসভার ভোট রয়েছে। ২০০৩ সালে যাঁদের ভোটার তালিকায় নাম ছিল, তাদের এবারের খসড়া ভোটার তালিকাতেও নাম থাকবে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে  এই ভোটারের সংখ্যা ৪.৯ কোটি। তাঁদের নতুন করে কোনও পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে না।

যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, তাঁরা যে আর কোনোদিন ভোট দিতে পারবে না, এমন নয়। যদি কেউ বৈধ ভোটার হন এবং কোনও কারণে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ গিয়ে থাকে, তাহলে আগামী ১ সেপ্টেম্বর অবধি তার হাতে এক মাস সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা নতুন করে আবেদন করতে পারবেন। সেজন্য উপযুক্ত নথি জমা দিতে হবে। এখানে ১১টি নথির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই নথিগুলির মধ্যে যে  কোনও একটি দেখাতে পারলেই ভোটার তালিকায় নাম উঠে যাবে। সেগুলি হল-


১. জন্ম শংসাপত্র

২. রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী হলে, তার পরিচয়পত্র।

৩. ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার প্রদত্ত কোনও পরিচয়পত্র বা সার্টিফিকেট। ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, এলআইসির নথিও গ্রহণ করা হবে।

এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছেন, সেই ভোটারদের জন্ম তারিখ এবং জন্মস্থানের প্রমাণ্য নথি দাখিল করতে হবে। ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের পর যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁদের নিজের পরিচয়ের প্রমাণ্য নথির সঙ্গে বাবা-মায়েরও নথি জমা করতে হবে। আবার ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বরের পরে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই নিয়মাবলী প্রযোজ্য হবে।

৪. পাসপোর্ট

৫. রাজ্য প্রদত্ত পার্মানেন্ট রেসিডেন্স সার্টিফিকেট।

৬. সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসাপত্র, যেখানে জন্মতারিখ উল্লেখ রয়েছে।

৭. ওবিসি/এসসি/এসটি বা অন্য কাস্ট সার্টিফিকেট।

৮. ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট বা বন অধিকার শংসাপত্র। 

৯. রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের তৈরি ফ্যামিলি রেজিস্টার।

১০. জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি (যেখানে চালু হয়েছে)।

১১. সরকারের দেওয়া জমির নথি, বাড়ির নথি।

বিহারে নিবিড় সংশোধনের জন্য বুথ লেভেল আধিকারিকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করেছেন। এনিউমেরেশন ফর্মও জমা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও যদি কোনও ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই ফর্ম জমা না করে থাকেন, তবে তাঁদের ডিক্লারেশন ফর্মের সঙ্গে ফর্ম ৬-ও জমা করতে হবে।
আবেদনের পদ্ধতি অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে কারোর আপত্তি থাকে, যদি কেউ তালিকায় নাম সংযোজন বা বিয়োজন করতে চান, তাহলে তাঁদের ফর্ম-৬ পূরণের সঙ্গে জমা দিতে হবে নতুন ডিক্লারেশন ফর্ম।

আবার কেউ যদি একই বিধানসভা বা তার বাইরে ঠিকানা বদল করতে চান, তবে তাদের পূরণ করতে হবে ফর্ম-৮। কোনও সংশোধন বা বিশেষভাবে সক্ষম তালিকাভুক্ত হতে চাইলে কিংবা এপিক রিপ্লেসমেন্টের জন্য ফর্ম ৮ ও ডিক্লেরেশন ফর্ম জমা করতে হবে। যেহেতু এখনও পর্যন্ত কেবল বিহারেই ভোটার তালিকায় নিবিড় পরিমার্জন হয়েছে, তাই ভিন রাজ্য থেকে বিহারে কোনও ব্যক্তি এসে বসবাস করলে এবং সেখানে ভোটার হতে চাইলে ফর্ম-৮ জমা করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, বিনা তদন্তে বা যথাযথ সুযোগ দেওয়া ছাড়া খসড়া ভোটার তালিকা থেকে কোনও ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হবে না।  যাচাইয়ের পর সমস্ত ভোটারদের তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। যদি কোনও ব্যক্তির নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিকের সিদ্ধান্তে আপত্তি থাকে, তবে তিনি জনপ্রতিনিধি আইন ১৯৫০-র ২৪(এ) ধারার অধীনে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে পারেন। যদি জেলাশাসকের সিদ্ধান্তেও কেউ অখুশি হন বা সম্মত না হন, তাহলে জেলাশাসকের অর্ডার বা নির্দেশ দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ফের আবেদন করতে পারেন।

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর যদি কোনও নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক বা সহকারী নির্বাচনী আধিকারিকের কোনও ভোটারের বৈধতা বা নাগরিকত্ব নিয়ে সংশয় থাকে, তবে তারা স্বতঃপ্রণোদিত তদন্ত শুরু করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ওই ভোটারের কাছে নোটিস পাঠিয়ে  কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে, কেন তাঁর নাম ভোটার তালিকায় থাকবে? তদন্ত ও নথির ভিত্তিতে ইআরও  সিদ্ধান্ত নেবেন যে ওই ব্যক্তির নাম চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় থাকবে কি না।