সিএএ নিয়ে আন্দোলনকারীদের ছবি-সহ হাের্ডিং আইনসম্মত নয়, বলল আদালত

নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের ছবি, নাম, ঠিকানা'সহ হাের্ডিং। (Photo: Twitter | @VasanthFocus)

সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সিএএ’র বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ছবিসহ নাম, ঠিকানা লেখা হাের্ডিংয়ে ছেয়ে গিয়েছে লখনউ। উত্তরপ্রদেশ সরকার সেই হের্ডিংয়ের নাম দিয়েছিল ‘নেম-শেম’। জনস্বার্থ মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট স্পষ্ট বলেছিল ওই হের্ডিং নামিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু যােগী আদিত্যনাথ সরকার ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। কিন্তু শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিল, ওই হের্ডিং কোনওভাবেই আইনসম্মত নয়। 

এদিন সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি ইউইউ ললিতের এজলাসে এই মামলার শুনানি ছিল। আদালত বলে, ‘কেউ বিক্ষোভ করতেই পারেন। এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু কোনও নির্বাচিত সরকার এভাবে হের্ডিং লাগাতে পারে না। এটা আইনসম্মত নয়।’ 

লখনউয়ের রাস্তায় নাম-ছকি-ঠিকানা দিয়ে প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছিল সিএএ-প্রতিবাদীদের পরিচয়। উত্তরপ্রদেশ সরকারের টাঙানাে হাের্ডিংয়ে ছিল ৫৩ জন আন্দোলনকারীর নাম ও অন্যান্য তথ্য। এই নিয়ে দু’দিন আগেই যােগী আদিত্যনাথ সরকারকে তীব্র ভৎর্সনা করেছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। স্পষ্ট বলেছিল ওই হাের্ডিং নামিয়ে ফেলতে। কিন্তু আদিত্যনাথ সরকার বুধবার জানিয়ে দেয় তারা ওই হাের্ডিং নামাবে না। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাবে। 


হাের্ডিংয়ে নাম, ছবি দেওয়া ৫৩ জনের মধ্যে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার এস আর দারাপুরি, সমাজকর্মী মহম্মদ শােয়েব, কবি দীপক কবীরের মতাে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরাও। রয়েছে কংগ্রেসের স্থানীয় মহিলা নেত্রী সাদাফ জাফরও। গত বৃহস্পতিবার, গােটা লখনউ শহরের বিভিন্ন রাস্তাজুড়ে ছেয়ে যায় বড় বড় হাের্ডিং। তাতে ৫৩ জন প্রতিবাদী আন্দোলনকারীদের নাম, ছবি, ঠিকানা লেখা ছিল। 

মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথের নির্দেশেই ওই হের্ডিংগুলি পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাঙানাে হয়েছে বলে জানা যায়। তবে শুধু হের্ডিং নয়, আন্দোলনের জেরে লখনউ শহরে যে ক্ষতি হয়েছে, তাও আন্দোলনকারীদের থেকে আদায় করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় উত্তরপ্রদেশ সরকার। এই প্রসঙ্গে যােগী সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য মহসিন রাজা কড়া সুরে জানিয়ে দেন,  ‘সিএএ-বিরােধী প্রতিবাদের নামে এঁরা ভাঙচুর, অগ্নিসংযােগ করেছেন। রাজ্যের মানুষের ক্ষতি করেছে এবং সরকারি সম্পত্তিনষ্ট করেছে। এখন সেই ক্ষতিপূরণ তাদের কাছ থেকে আদায় করা হবে।’ 

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণােদিত হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি গােবিন্দ মাথুরের বেঞ্চে চলে শুনানি। আদালত বলে, ‘সিএএ বিক্ষোভকারীদের নাম, ঠিকানা দিয়ে হাের্ডিং টাঙানাে অত্যন্ত অন্যায়। স্বশরীরে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় ডিসিপি এবং মহকুমা শাসকদের। ভৎর্সনা শুনানির পরে এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানায়, দিল্লি হিংসার পরে মেন ঘােষণায় সরকার সবাইকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। এমন পরিবেশ মােটেই নিরাপদ নয়। তবে এদিনের শুনানির পর সুপ্রিম কোর্ট কোনও রায় দেয়নি। জানা গিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার ফেল এই মামলার শুনানি হবে বিচারপতি ইউইউ ললিতের এজলাসে।