সহানুভূতির ভিত্তিতে উচ্চতর পদ দাবি করা যাবে না: সুপ্রিম কোর্ট

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

কোনও মৃত কর্মচারীর উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিকে সহানুভূতির ভিত্তিতে চাকরি দেওয়ার অর্থ হল, তার অধিকার প্রয়োগ করা। এরপর উচ্চতর পদে নিয়োগ চাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। শীর্ষ আদালত মনে করে, ওই ব্যক্তি যদি কোনও উচ্চতর পদের যোগ্যও হন, তবুও তিনি সেই পদে নিয়োগের অধিকার দাবি করতে পারেন না। কারণ এই নিয়োগ হয় সম্পূর্ণভাবে মানবিক কারণে। এই ধরণের নিয়োগগুলি সাধারণ নিয়োগবিধি অনুসারে হয় না। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘অন্তহীন করুণা হতে পারে না। ‘

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এবং বিচারপতি মনমোহনের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘মৃত কর্মীর উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি যদি যোগ্যও হন, সহানুভূতির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কোনও পদে তাঁকে নিয়োগের পর, আবার তাঁকে উচ্চ পদে নিয়োগ করা যায় না। তিনি অধিকার হিসেবে তা দাবি করতে পারেন না। মানবিক কারণে এই নিয়োগ হওয়ার জন্য একে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখতে হবে।’ বলা হয়েছে, ‘একবার প্রয়োগ করা অধিকার বারবার প্রয়োগ করা যাবে না।’

প্রাথমিকভাবে ঝাড়ুদার হিসেবে নিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে সহানুভূতির ভিত্তিতে জুনিয়র সহকারী পদে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে মাদ্রাজ হাইকোর্টে মামলা হয়। সেই সময় হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, দুজনকেই জুনিয়র অ্যাসিসটেন্ট পদে উন্নীত করতে হবে। মাদ্রাজ হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় তামিলনাড়ু সরকার। দুটি পৃথক আবেদনের ভিত্তিতে শীর্ষ আদালত এই রায় দিয়েছে।


বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘একবার মৃত কর্মচারীর পরিবারের সদস্যকে সহানুভূতির ভিত্তিতে নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হলেই উদ্দেশ্যটি যথাযথভাবে পূর্ণ হয়। সুতরাং, আবার উচ্চতর পদে পরবর্তী নিয়োগের জন্য তাঁকে পুনরায় বিবেচিত হওয়ার অধিকার টেকে না।’ বেঞ্চ আরও বলেছে যে, ‘একটি সহানুভূতির নিয়োগকে উচ্চপদে আরোহণের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।’

বিএমডব্লু দুর্ঘটনায় জামিনের আর্জি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে মুম্বই, ১৩ ডিসেম্বর— দেড় বছর আগের মুম্বইয়ের বহুচর্চিত বিএমডব্লিউ দুর্ঘটনা মামলায় মূল অভিযুক্ত মিহির শাহের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত স্পষ্ট ভাষায় জানায়, এই ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তদের কড়া শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।

মিহির শাহ মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন শিবসেনা নেতা রাজেশ শাহের ছেলে। রাজেশ শাহ শিবসেনা (শিন্দে গোষ্ঠী)-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মিহির গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দুর্ঘটনাটি ঘটে গত বছরের জুলাই মাসে মুম্বইয়ের ওরলি এলাকায়। অভিযোগ, বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় একটি স্কুটারে ধাক্কা মারেন মিহির। সেই ঘটনায় স্কুটার আরোহী কাবেরী নাকওয়ারের মৃত্যু হয় এবং তাঁর স্বামী গুরুতর আহত হন।

অভিযোগ, ধাক্কা লাগার পর কাবেরী কিছুক্ষণ গাড়ির বনেটে আটকে ছিলেন। পরে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ গাড়ির চাকায় জড়িয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। এরপর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান ২৪ বছর বয়সি মিহির। তিন দিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বম্বে হাই কোর্ট আগেই মিহিরের জামিনের আবেদন খারিজ করেছিল। পরে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ জানায়, অভিযুক্ত একজন প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য এবং তাঁর বাবার রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। এই বিষয়টিও আদালত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। আদালতের মন্তব্য, ‘তাঁকে আরও কিছুদিন জেলেই থাকতে দেওয়া হোক। এই ধরনের ছেলেদের শিক্ষা হওয়া দরকার।’

পুলিশি তদন্তে আরও জানা যায়, দুর্ঘটনার আগে জুহুর একটি বারে বন্ধুদের সঙ্গে মদ্যপান করেছিলেন মিহির। অভিযোগ, দুর্ঘটনার সময় তিনি মত্ত অবস্থায় ছিলেন। এই মামলায় মিহিরের বাবাকেও গ্রেপ্তার করা হয়, যদিও পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। গাড়ির চালক রাজঋষি বিদাওয়াতকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।