মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বানে আবার বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

দেরাদুন, ১৭ সেপ্টেম্বর- আবার মেঘভাঙা বৃষ্টিপাত এবং হড়পা বানে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড। সোমবার রাত থেকে একনাগাড়ে বৃষ্টিপাত হয়ে চলেছে দেরাদুন এবং রাজ্যের অন্যান্য এলাকায়। জলস্তর বেড়ে গিয়েছে যমুনা, তমসা, গঙ্গা এবং আরও অন্যান্য নদীর। কিছু কিছু এলাকায় হড়পা বান দেখা দিয়েছে। হিমাচল প্রদেশেও পরস্থিতি একইরকম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দু’টি রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন। নিখোঁজ হয়েছেন আরও ২০ জন। দু’টি রাজ্যেরই বিভিন্ন জায়গায় অনেক মানুষ আটকে রয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের উদ্ধার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুনের পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। জানা গিয়েছে, ওই শহরে ইতিমধ্যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের ৮ জন শ্রমিক। দেরাদুনে তমসা নদী ফুঁসছে তীব্র জলের স্রোতে। সেই জলে একটি ট্র্যাক্টর আটকে পড়ে এবং ট্র্যাক্টরে থাকা শ্রমিকরা প্রাণ হারান। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি মৃতদের পরিবারের সদস্যদের ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য প্রদান করার কথা ঘোষণা করেছেন। পিথোড়া এবং নৈনিতাল জেলা থেকে আরও ২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। দেরাদুন এবং রাজ্যের নানান এলাকায় বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। অনেক সেতু এবং রাস্তা ধসে গিয়েছে। অনেক জায়গায় বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল, কলেজ, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র।

জানা গিয়েছে, দেরাদুনে পৌন্ধার দেবভূমি ইনস্টিটিউটে ৪০০-৫০০ জন পড়ুয়া আটকে পড়েছিলেন। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তৎপরতায় ছাত্রছাত্রীদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ থামার কোনোরকম পূর্বাভাস এখনই নেই। বুধবার উত্তরাখণ্ডের কিছু জেলায় আবহাওয়া দপ্তর থেকে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। চম্পাবত, দেরাদুন, উধম সিংহ প্রভৃতি জায়গায় শনিবার পর্যন্ত চলবে ভারী বৃষ্টিপাত।


উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী জানিয়েছেন যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার মূল্যায়ন এবং জরুরিকালীন তৎপরতায় ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জরুরি অপারেশন সেন্টারগুলিকে। রাজ্যের ১৩টি সেতু এই প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইতিমধ্যেই। নষ্ট হয়ে গিয়েছে ১২ টি কৃষিজমি এবং প্রচুর ফসল। রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২.৩ কোটি টাকা। ধস নেমে ভেঙে গিয়েছে ২১টি রাস্তা। ভেঙে গিয়েছে অনেক বাঁধ।

হিমাচল প্রদেশও একইরকমভাবে বিপর্যস্ত। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে মান্ডী জেলার অনেক ঘরবাড়ি। জলের স্রোতে ধরমপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকগুলি বাস ভেসে গিয়েছে। মান্ডী জেলার ব্রাগতা গ্রামে ভূমিধসের ফলে বাড়ি ধসে গিয়ে পরিবারের তিনজন সদস্যের মৃত্যু হয়। প্রাণ হারিয়েছেন ২ জন মহিলা এবং ১টি শিশু।

উল্লেখ্য, হিমাচল প্রদেশে এই বছরের বর্ষার মরসুমে ভারী বর্ষণের জেরে নানান ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩০০ জনের। হিমাচল প্রদেশের বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ দপ্তর (এসডিএমএ) থেকে জানানো হয়েছে যে, হড়পা বান, ভারী বৃষ্টিপাত, ধস নামা ইত্যাদি কারণে প্রাণ হারিয়েছেন রাজ্যের প্রায় ১৫২ জন। পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে আরও ১৪০ জনেরও বেশি মানুষের। চলতি বছরে হিমাচলে অন্যান্য বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।