গুজরাত-মধ্যপ্রদেশ, চার বিএলও-র মৃত্যুতে কাঠগড়ায় কমিশন

শুধু সাধারণ মানুষ নন, একের পর এক বিএলও-র মৃত্যুতে কাঠগড়ায় মৃত্যু এসআইআরের চাপ। দেশের নানান প্রান্ত থেকে এসআইআরের কাজের চাপ নিতে না পেরে আত্মহত্যা এবং মৃত্যুর খবর আসছে প্রতিনিয়ত। শক্রবার ফের সেই মৃত্যুর খবর। পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, বিহারের পরে এবার গুজরাত এবং মধ্যপ্রদেশ। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্য গুজরাতে দুই বিএলও-র মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। অন্যদিকে, মধ্যপ্রদেশের দুই বিএলও-র মৃত্যুতেও সেই একই অভিযোগ পরিবারের। এসআইআর নিয়ে কাজের চাপের অভিযোগ তুলেছে। ‌

জানা গিয়েছে, প্রথম মৃত্যুর খবরটি আসে গুজরাতের কোদিনা জেলা থেকে। সরকারি স্কুল শিক্ষক অরবিন্দভাই মুলজীবভাই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।‌ অরবিন্দ বাধের সুইসাইড নোটে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে এসআইআর-এর কাজ নিয়ে আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আর পেরে উঠছি না। তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম।’ ‌তাঁর পরিবার থানায় অভিযোগ করেছে, স্কুলের কাজ সেরে এসআইআর-এর বিপুল চাপ সামাল দিতে পারছিলেন না ওই শিক্ষক।‌ তাঁর পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানিয়েছে, শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েই এই পরিণতি শিক্ষকের।দ্বিতীয় মৃত্যু হয়েছে গুজরাতের খেড়া জেলায়। এখানে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন একটি সরকারি স্কুলের প্রিন্সিপাল রমেশভাই পারমার।‌ তাঁরও পরিবারের অভিযোগ, এসআইআর-এর কাজ নিয়ে প্রবল চাপের মুখে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ‌ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা যান। ওই শিক্ষকের পরিবারও থানায় অভিযোগ দায়ের করে বলেছে, এসআইআর এর চাপেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন ওই শিক্ষক। ‌ দুই বিএলও-র মৃত্যু এবং থানায় অভিযোগে স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। ঘটনার পর গুজরাতের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার বলেছেন তাঁরা অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন। দুই শিক্ষকের মৃত্যুতে রাজ্যের শিক্ষক সংগঠন এসআইআর বয়কটের ডাক দিয়েছে।‌

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি মধ্যপ্রদেশের রাইসেন এবং দামোহ জেলায়। রমাকান্ত পাণ্ডে এবং সীতারাম গন্ড নামে দুই বিএলও-র মৃত্যুতে উঠেছে সেই একই প্রশ্ন।  সূত্রের খবর, মৃত রমাকান্ত সুলতানপুর এলাকায় একটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি, মন্দিদীপ এলাকায় বিএলও হিসাবেও তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার রাতে আচমকা তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর মধ্যরাতে তাঁর মৃত্যু হয়। সীতারামও পেশায় ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি রানজ্রা গ্রামের বিএলও হিসাবেও তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।

অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এনুমারেশন ফর্ম ভরার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। শুক্রবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। দু’ক্ষেত্রেই পরিবারের অভিযোগ, এসআইআর-এর কাজের চাপে বেশ কিছুদিন ধরেই বেশ চিন্তিত ছিলেন তাঁরা। তার ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।


উল্লেখ্য, এর আগে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কয়েকজন বিএলও কাজের চাপ সামাল দিতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।‌ অসুস্থ হয়েও মারা গিয়েছেন কয়েকজন। তারপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনকে তাই চিঠি লিখে অবিলম্বে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। যদিও সেই চিঠির পর কোনও পরিবর্তন হয়নি নির্বাচন কমিশনের কার্যবিধিতে। তৃণমূল ছাড়াও সিপিএম এবং কংগ্রেস সহ অন্যান্য দলও এসআইআর নিয়ে আপত্তি তুলেছে।