সরকারি নির্দেশকে হাল্কাভাবে না নেওয়ার আহ্বান, প্রয়োজনে কার্ফু জারি করা হতে পারে

দেশজুড়ে লকডাউন। (Photo: AFP)

সরকারের সময়োচিত লকডাউন নির্দেশের পর মোটামুটিভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তেমনভাবে আর বাড়েনি বলেই সরকারি সুত্রে জানানো হয়েছে। তবে বুধবার তামিলনাড়ুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে, ফলে দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১। বুধবার পর্যন্ত নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫৬২। বুধবারে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ জন।

করোনা সংক্রমণে এই প্রথম মৃত্যু হল তামিলনাড়ুতে। তবে আশঙ্কার কথা হল উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। প্রথম আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে মিজোরামে। মধ্যপ্রদেশেও নতুন করে পাঁচজনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। উত্তর প্রদেশের পিলভিটের এক আক্রান্তকে লখনউয়ের কিং জর্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এখনও পর্যন্ত দেশে আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে কেরল। কেরলে এপর্যন্ত ১০৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে সরকারি সুত্রে জানানো হয়েছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে মহারাষ্ট্র। সেখানে ১০১ জন আক্রান্ত।


তবে খুশির খবর হল দেশের চিকিৎসকদের চেষ্টায় এপর্যন্ত ৪০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। রাজ্যগুলি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, কিন্তু মঙ্গলবার রাত থেকে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করায় বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে সারা দেশে একুশ দিনের লকডাউনের কথা ঘোষণা করেন। অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই লকডাউন ব্যবস্থা। এসময়ে প্রতিটি নাগরিককে ঘরের মধ্যে থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সকাল বেলায় নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে প্রাত্যহিক প্রয়জনীয় জিনিস সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কোনও অভাব নেই। তাই অযথা হুড়োহুড়ি করে বা একসঙ্গে অনেকটা দ্রব্য সংগ্রহ করে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। প্রত্যেক দিনই সকালে দুধ, পাঁউরুটি, ওষুধ সবই পাওয়া যাবে। ওষুধের দোকান যথারীতি সারাদিনই খোলা থাকছে।

তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে অযথা জটলা বা ছুটি ভেবে রাস্তায় কোনও কাজ ছাড়াই ঘোরাঘুরি করলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা করবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। কোনও খাবারের দোকান খোলা রাখা যাবে না বলেও প্রশাসনের পক্ষে জানানো হয়েছে। এমনকী পাড়ার চায়ের দোকানগুলিও বন্ধ রাখার প্রামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সুত্রে জানানো হয়েছে, দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একযোগে মানুষের নিরাপত্তার কারণেই ঘরে থাকার প্রামর্শ দিচ্ছেন। এই নির্দেশ অমান্য করলে নিজের ও অন্যের বিপদ বাড়বে। এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে একশো শতাংশ। তাই অসুবিধা হোক সরকারি নির্দেশকে কোনওভাবেই হাল্কাভাবে না নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষে।

সকালে বাজারে যাওয়ার সময়ে ব্যক্তির থেকে ব্যক্তির দুরত্ব অন্তত পক্ষে এক মিটার বজায় রাখার বিষয়টি পালন করা অত্যন্ত জরুরি। ওষুদের দোকানের লাইনে দাঁড়ালেও একই নিয়ম বা দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যেই দেশের কয়েকটি রাজ্যে সরকারি নির্দেশ অমান্য করায় কার্ফু জারি করতে হয়েছে। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী বারবার সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে সংবাদমাধ্যম মারফত ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমে আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু তেলেঙ্গানার বেশকিছু এলাকায় মানুষ সরকারি নির্দেশ অমান্য করায় সেখানে কার্ফু জারির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্র ও রাজ্যসরকারগুলির পক্ষে বারবার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এতে সকলেরই মঙ্গল। এসময় চিকিৎসার সুযোগ হাসপাতালে জায়গা সঙ্কুলান হওয়াও এক সমস্যার কথা।

ভারতে সরকারি তৎপরতায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ কিছুটা হলেও প্রশমিত করা সম্ভব হয়েছে মানুষের সহযোগিতায়। কিন্তু উন্নত দেশগুলিতে সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

ইতিমধ্যেই উন্নত দেশগুলিতে আক্রান্তের সংখ্যা চার লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় আঠারো হাজার মানুষের। ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইতালিতে এপর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি মানুষের। আক্রান্তের সংখ্যা সত্তর হাজারের বেশি। চিনে নাকি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় নব্বই হাজার। চিনে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানা যায়নি।