বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্য-রাজনীতিতে বিরাট শোরগোল। পাটনার ব্যস্ত এলাকায় শুক্রবার রাতে খুন হলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিজেপি নেতা গোপাল খেমকা। তাঁর বাড়ির সামনে তাঁকে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এখনও ধরা পড়েনি আততায়ী।
কে বা কারা এই ঘটনার পিছনে রয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সাত বছর আগে গোপাল খেমকার ছেলে গুঞ্জন খেমকাকেও একই ভাবে খুন করা হয়েছিল। ডিজিপি বিনয় কুমার সংবাদ সংস্থাকে জানান, ঘটনার তদন্তের জন্য এসপি সেন্ট্রালের নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই গঠিত হয়েছে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে প্রায় ১১টা নাগাদ গান্ধী ময়দান থানার অন্তর্গত পানাচে হোটেলের কাছে ‘টুইন টাওয়ার’ সোসাইটির সামনে গোপাল খেমকাকে গুলি করা হয়। তিনি কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। অভিযোগ, বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছতেই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। কত রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি।
পুলিশ জানায়, সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়, কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পাটনা শহরের এসপি সেন্ট্রাল দীক্ষা কুমারী বলেন, ‘৪ জুলাই রাত ১১টা নাগাদ আমরা খবর পাই গান্ধী ময়দান দক্ষিণ এলাকায় গুলি চলেছে এবং ব্যবসায়ী গোপাল খেমকা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে। তদন্ত চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
নিহতের ভাই শঙ্কর খেমকার অভিযোগ, ‘গুলি চলার প্রায় তিন ঘণ্টা পরে এসেছে পুলিশ।’ তাঁর দাবি, ‘রাত ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয় রাত আড়াইটেয়।’ উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে গোপালের ছেলে গুঞ্জনকে দিনের বেলায় গুলি করে খুন করা হয়েছিল। পাটনা থেকে কিছুটা দূরে একটি তুলোর কারখানাতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ে গাড়ি থেকে নামতেই তাঁর উপরে গুলি চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। এ বার সেই একই কায়দায় খুন করা হলো গোপালকেও।
রাজ্য-রাজনীতিতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তরজা। বিরোধীরা সরব হয়েছেন বিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। ক্ষমতাসীন জেডিইউ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অনেকেই। জেডিইউ এনডিএ-র শরিক, তা সত্ত্বেও বিজেপির অন্দরেই উঠছে প্রশ্ন।
শনিবার সকালে গোপালের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান স্থানীয় বিজেপি নেতা রামকৃপাল যাদব। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, খবর দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ আসে। রামকৃপাল বলেন, ‘গোপাল একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবক ছিলেন। তাঁর বাড়ি থানার কাছেই, তবু পুলিশ দেরিতে এসেছে, এটা উদ্বেগজনক। এই খুনের পেছনের কারণ উদঘাটন করে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
নির্দল সাংসদ পাপ্পু যাদব ওরফে রাজেশ রঞ্জনও ঘটনাস্থলে যান এবং সমাজমাধ্যমে একাধিক পোস্টে বিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘বিহারে এখন কেউ নিরাপদ নন। রাজ্য অপরাধীদের বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।’ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রাজনৈতিক চাপানউতোরের মাঝে প্রশ্ন একটাই – কে বা কারা এই খুনের পিছনে, এবং কেন?