অক্টোবরের মাঝামাঝি জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার এক অচেনা গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল নাশকতার পরিকল্পনা। সেখানে কয়েকটি উস্কানিমূলক পোস্টার, এক সাধারণ এফআইআর, আর তারপরই ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে দেশের সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে বড় জঙ্গি নেটওয়ার্ক। যে ঘটনাক্রমের শেষ সূত্র মিলেছে দিল্লির ভয়াবহ লালকেল্লা বিস্ফোরণের মাধ্যমে।
ঘটনাক্রম ১৯ অক্টোবর। অনন্তনাগের নওগাম এলাকায় জইশ-ই-মহম্মদের সমর্থনে লেখা কয়েকটি আপত্তিজনক পোস্টার উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। প্রথমে বিষয়টিকে সাধারণ অপরাধ হিসেবেই দেখা হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত শুরু হতেই এক ভয়াবহ চক্রের পর্দা ফাঁস হয়।
এই ঘটনায় প্রথম গ্রেপ্তার শোপিয়ান জেলার মৌলবী ইরফান আহমদ ওয়াগে এবং গান্ডেরবালের জামির আহমদ। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদেই উঠে আসে এমন কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা গোটা কাশ্মীর ও উপত্যকার বাইরেও বিস্তৃত এক জঙ্গি যোগাযোগের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
৩০ অক্টোবর, তদন্ত পৌঁছয় হরিয়ানার ফরিদাবাদে। আল-ফালাহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডাঃ মুজাম্মিল শাকিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকেই মেলে অস্ত্র এবং গোপন যোগাযোগের সূত্র। এই ঘটনার পর থেকেই গোটা তদন্তের মোড় ঘুরে যায়।
৬ নভেম্বর, উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের এক হাসপাতালে ধরা পড়েন ডাঃ আদিল রাথার। পরদিন অনন্তনাগের একটি হাসপাতাল থেকে উদ্ধার হয় একটি একে–৫৬ রাইফেল ও প্রচুর গুলি। তদন্তে জানা যায়, শ্রীনগরে জইশের সমর্থনে পোস্টার লাগানোর ঘটনায় আগেও আদিলের নাম উঠেছিল। ফলে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।
৭ নভেম্বরের মধ্যেই তদন্তকারীরা স্পষ্ট করেন, গোটা চক্রটি চালাচ্ছিল একদল শিক্ষিত মেডিক্যাল প্রফেশনাল, যাঁদের মধ্যে ছিলেন ডাক্তার, অধ্যাপক ও হাসপাতালের কাজে যুক্ত কর্মচারীরা। এই কারণেই গোটা চক্রটির নাম দেওয়া হয় ‘হোয়াইট কলার টেরর মডিউল’। এতে যুক্ত ছিলেন লখনউয়ের এক মহিলা চিকিৎসক ডাঃ শাহিনও।
৮ নভেম্বর আল-ফালাহ মেডিক্যাল কলেজে চালানো হয় তল্লাশি অভিযান। সেখান থেকে উদ্ধার হয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক। এরপর ৯ নভেম্বর মেওয়াট ও ফরিদাবাদে ধারাবাহিক অভিযানে উদ্ধার হয় মোট ২,৫৬৩ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির উপকরণ—যা সাম্প্রতিক কালের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় জঙ্গি মজুত বলে মনে করা হচ্ছে।
শুধু ফরিদাবাদেই ৩৬০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার হয় ডাঃ মুজাম্মিল শাকিলের ভাড়া করা বাড়ি থেকে। যদিও তাঁর সহযোগী পালিয়ে যায়। পরে জানা যায়, সেই পলাতক চিকিৎসকই হলেন উমর উন নবি। যিনি এখন দিল্লির লালকেল্লা বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত।
জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং দিল্লির পুলিশ বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত অভিযানে কার্যত ভেঙে দেওয়া হয়েছে এই জইশ-ঘনিষ্ঠ জঙ্গি মডিউল।
তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এই অভিযান কয়েকদিন দেরিতে শুরু হলে, দেশের বুকে আরও ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটতে পারত। এখন গোটা ঘটনার মূল পরিকল্পনা, অর্থের উৎস এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের দিকটি খতিয়ে দেখছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ।