ভালোর ব্যবসা হবে সেই আশায় ফুলের চারা নিয়ে ওড়িশার বাজারে গিয়েছিলেন পূর্বস্থলীর একদল ব্যবসায়ী। কিন্তু বাংলায় কথা বলায় তাঁদের বাংলাদেশি ভেবে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশি সন্দেহে আটকে পড়া পাণ্ডবপাড়ার চার ফুলচারা বিক্রেতাকে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। যদিও এই ঘটনার পর আতঙ্ক কাটেনি তাঁদের মধ্যে। কয়েক দিন কেটে গেলেও আর ওড়িশায় চারা নিয়ে যেতে রাজি নন ওই ব্যবসায়ীরা। ফলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফুলচাষ নির্ভর পূর্বস্থলীর বহু চাষি ও ব্যবসায়ী।
পূর্বস্থলীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মরশুমি ফুলচাষ কেন্দ্র করে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন, আর ভালো বাজারের আশায় এখানকার ব্যবসায়ীরা ফুলগাছের চারা নিয়ে নিয়মিত ভিনরাজ্যে যান। এ বারও কৃষ্ণচন্দ্র ঘোষ-সহ কয়েকজন ওড়িশায় চারা বিক্রি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, সেখানে কেউ বাংলায় কথা বললেই তাঁকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে বাংলাতেই কথা বলেন, তা অনেকেই মানতে রাজি নন। ঠিকানার প্রমাণপত্র দেখিয়েও লাভ হচ্ছে না। উল্টে বলা হচ্ছে, নথিগুলি নাকি বাংলাদেশ থেকে আনা। এই সন্দেহেই বিক্রেতাদের আটকে রেখে হয়রানি করা হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যাঁরা আগে দু’তিন দিন ওড়িশায় থেকে চারা বিক্রি করতেন, তাঁরা এখন ভয় পেয়ে দিনে একবেলা বিক্রি করেই তড়িঘড়ি ট্রেনে বাড়ি ফিরছেন। এই পরিস্থিতিতে সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়ছেন পূর্বস্থলীর ফুলচাষিরা।
গাড়ি করে গাছের চারা নিয়ে ওড়িশায় বিক্রি করতে গিয়ে গুরুতর সমস্যায় পড়েছেন বাবু দফাদার। তাঁর অভিযোগ, ‘বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশি সন্দেহে মারধরও করছে। গাছ ভেঙে দিচ্ছে। নথি দেখালেও বিশ্বাস করছে না। বাধ্য হয়ে সব সময় হিন্দিতে কথা বলে কোনওরকমে বিক্রিবাটা করে ফিরে আসছি।’ অন্যদিকে ফুলচাষি বাবর আলি বলেন, ‘এ বারই এরকম প্রথম হচ্ছে। অনেকে ওডিশায় না-গিয়ে বিহারে যাচ্ছেন। কিন্তু সেখানেও কতদিন তাঁরা নিরাপদে ব্যবসা করতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে।’
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক টানাপড়েন। তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, ‘অনেকেই ওডিশায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। ভয়টা হেনস্থা করা বা আটকে রাখার। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এ সবের পিছনে রয়েছে বিজেপি। বলছে বাংলা ভাষায় কথা বলা যাবে না। বাংলাকে ভাতে মারবে বলে বিজেপি চক্রান্ত করছে।’ অন্য দিকে বিজেপির বর্ধমান বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গোপাল চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তৃণমূল সরকার বাংলায় যথেষ্ট কর্মসংস্থান তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় রাজ্যের যুবকদের ভিনরাজ্যে যেতে হচ্ছে। তাঁর মন্তব্য, ওড়িশায় যাঁদের আটকানো হয়েছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে। শুধু বাংলায় কথা বলার জন্য সেখানে কাউকে আটকানো হবে—এ দাবি অবাস্তব ও ভিত্তিহীন।