আজ থেকে বাংলায় চালু হচ্ছে না বিমান পরিষেবা

আজ থেকে বাংলায় চালু হচ্ছে না বিমান পরিষেবা। (Photo by Arun SANKAR / AFP)

আপত্তি জানিয়েছিল রাজ্য। সেই আপত্তিতেই সিলমোহর দিল কেন্দ্র। কলকাতা ও বাগডোগরার ক্ষেত্রে ২৮ মে থেকে বিমান পরিষেবা শুরু হবে। অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রে কি হবে তা দ্রুত জানানো হবে বলে অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক জানিয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবা চালু কার মাত্র একদিন আগে এই ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে এদিনই আবার দেশীয় ও অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবার নয়া নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে কেন্দ্র।

চতুর্থ দফা লকডাউন চলাকালীন বিমান, ট্রেন ও বাসের ক্ষেত্রে কি কি নিয়ম মেনে চলতে হবে সেই নির্দেশিকাও জারি করেছে কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন বিমান পরিষেবা ২৮ মে থেকে চালু করতে। সেই আর্জিতেই সাড়া দিয়েছে কেন্দ্র। এদিকে কলকাতা বিমানবন্দর দীর্ঘ দেড় মাস পর আবার কর্মচঞ্চল হয়ে পড়ল।

বৃহস্পতিবার আম্ফানের তাণ্ডবের চৌদ্দ ঘণ্টা পর বোয়িং বি৭৫৭-২৮এ কলকাতা বিমানবন্দরে এসে নামল। লকডাউনের ফলে দীর্ঘ দুই মাস কলকাতা ও অন্যান্য শহরে আটকে পড়া ১০২ জন রাশিয়ার নাগরিককে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিমানটি এসেছে।


টার্মিনাল ছাদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিমান বন্দরের দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থিত পাঁচ দশকের বেশি আগে তৈরি হ্যাঙ্গারটি আম্ফানের তাণ্ডবে ভেঙে পড়ে। বিমানবন্দরের একটি অংশে জল জমে যায়। কিন্তু জল বের করা যায়নি, সংলগ্ন নারায়ণপুর এলাকায় জল জমে থাকার ফলে। কিন্তু বিমান বন্দরের কাজ পরিচালনায় এতে কোনও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারেনি।

আম্ফানের আগাম খবর পেয়েই কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বিমানবন্দরের ছাউনি থেকে বিমানে ওঠার সিড়ি এবং বিমানের রাখার জায়গা হ্যাঙ্গারগুলি যতটা সম্ভব নিরাপদ করার কাজে লেগে পড়েন। উঁচু পোস্টের লাইটগুলি নামিয়ে আনা, বিমানবন্দরের ছাউনির যে সকল স্থানে মেরামতের দরকার সেগুলি মেরামত করা ইত্যাদি কাজে লেগে পড়েন কর্মীরা। ফলে দীর্ঘদিন পর আবারও কর্মঞ্চল হতে দেখা গিয়েছে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এই তৎপরতা কিন্তু আখেরে কাজে দিয়েছে। বিমানবন্দর জলমগ্ন হয়ে পড়লেও আরও যা ক্ষতি হতে পারত তা হয়নি আগাম সতর্কতা মেনে নিরাপত্তাবাহিনীর তৎপরতার ফলেই। এখন সোমবার থেকেই আন্তর্জাতিক বিমান চালানোর চেষ্টায় আছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়েছে আম্ফানের দাপটে রাজ্যের কয়েকটি জেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এছাড় কলকাতা শহরেই পাঁচ হাজারের বেশি বড় গাছ উপড়ে পড়ার ফলে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি একেবারে বন্ধ হয়ে পড়েছে। গাছ কাটা বা বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য সেনা তলব করতে হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের আগে শহর কলকাতা পুরোপুরি প্রতিবন্ধকতা বা অবরোধ মুক্ত হতে পারছে না। এর ওপর করোনাভাইরাসের কুটি তো আছেই। মানুষ একেবারে নাজেহাল অবস্থায় রয়েছে।

কলকাতা শহরের লাগোয়া দুই চব্বিশ পরগনাতেই আম্ফানের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই একলাখ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়েছেন। ফলে এখনই কলকাতা বিমানবন্দর চালু করলে রাজ্যপ্রশাসন আগত যাত্রীদের পরীক্ষা ও কোয়ারিন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করতে পারবে না।

প্রাথমিক কাজ হিসেবে শহর ও শহরতলীর বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া ও পানীয় জলের সরবরাহ স্বাভাবিক করাই এখন সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ইতিমধ্যেই পাঁচদিন হয়ে গেল কিন্তু এখনও বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, নেই পানীয় জলের সরবরাহ, কোথাও আবার জল জমে রয়েছে।

ফলে পুরসভার জল সরবরাহ থাকলেও মানুষ সেই জল তুলতে পারছেন না। ডুবো জায়গা ছেড়ে বেপাড়ায় গিয়ে পানীয় জল নিয়ে আসতেই সময় যাচ্ছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে সকলেই ঘরবন্দি। তাই সময়টা এখন কোনও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে না। অখণ্ড অবসর তান্ডবের। বরং আম্ফানের তাণ্ডবের ফলে সচলতার কিছুটা স্বাদ পেয়ে মানুষ বেঁচেছেন। তাদের কাজ হাতে এসেছে। ফলে সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক বিমানচলাচল শুরু হলেও কলকাতায় বিমান ওঠানামা করবে না।